বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রংপুরে বোরোতে ১২ হাজার কোটি লিটার পানি অপচয়

কৃষক ও পাম্প অপারেটরদের সচেতন করা জরুরি

নজরুল মৃধা, রংপুর

১ কেজি বোরো ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ পানি লাগে এর চেয়ে দ্বিগুণ- তিন গুণ পানি ব্যবহার করছে কৃষক। এ ছাড়া বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই রংপুরসহ আশপাশ এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতি বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ১২ হাজার কোটি লিটার বেশি পানি অপচয় হচ্ছে অজ্ঞতার কারণে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে প্রকৃতিতে নেতিবাচক  প্রভাব ফেলছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ১২০০ থেকে ২০০০ লিটার পানি খরচ করলেই হয়ে যায়। কিন্তু কৃষক তা না মেনে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার লিটার পানি খরচ করে ১ কেজি ধান উৎপাদন করছে। রংপুর অঞ্চলে ৫ জেলায় ৫ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ১৫০০ থেকে ২০০০ লিটার পানি বেশি খরচ হচ্ছে। সেই হিসাবে অতিরিক্ত পানি খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি লিটার। এসব পানি গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলন করে খরচ করা হচ্ছে। পানির অপচয় রোধে সরকার কৃষিকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন করেছে। আইনটি পাস হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ৫ বছরেও এই আইনটি এ অঞ্চলে বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে লাখ লাখ সেচযন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আগাম নেমে যেতে শুরু করে। ১০ বছর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে থাকলে এখন অনেক স্থানে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচেও পাওয়া যায় না। পানির প্রবাহ যখন স্বাভাবিক থাকে তখন এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২ ফুট নিচে পাওয়া যায়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, এ অঞ্চলে সেচ মৌসুমে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। যা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের বুড়িরহাট হটিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম বলেন, ধানগাছ কখনো জলজউদ্ভিদ নয়।  তবে ধানগাছ পানি পছন্দ করে। কৃষকরা না বুঝেই এই পানি খরচ করছে। এর  পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দেয় চুক্তিভিত্তিক। চুক্তি মতে ৪ থেকে ৬ বারও জমি সেচ দেওয়া হয়। এতে পানি কতটুকু খরচ হলো কৃষক এবং পাম্প অপারেটর কেউ বুঝতে পারে না। এ বিষয়ে কৃষক ও পাম্প অপারেটরদের সচেতন করা জরুরি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর