শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে দৈনিক ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে দৈনিক ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা

চট্টগ্রামে মাস খানেক ধরে প্রকট বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন স্বল্পতার কারণে দৈনিক লোডশেডিং করতে হচ্ছে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। এরই মধ্যে নগরে চলাচল করা প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশায় দৈনিক বৈধ-অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিট। সে হিসাবে দৈনিক ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলছে এসব রিকশা। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা মাসে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তবে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা না থাকার কারণে বিদ্যুৎ সংকটের এ চরম সময়েও অপচয় হচ্ছে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় একটি অংশ।

পিডিবির চট্টগ্রাম বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে লোডশেডিং কমে আসবে। ব্যাটারিচালিত রিকশার চার্জিংয়ের কারণে যে বিদ্যুৎ সংকট হচ্ছে তা নয়। কিন্তু এসব তো আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে। এনার্জি কমিশন থেকে বলা হয়েছে বৈধভাবে কোনো চার্জিং স্টেশন করতে চাইলে তাহলে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারব। এখন এসব যানবাহন যদি অবৈধ হয় তাহলে সেটা কীভাবে বিক্রি হচ্ছে, সেটা বন্ধ করা হচ্ছে না কেন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জানা যায়, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দিন যত যাচ্ছে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আধঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে এরপর ঘণ্টাখানেক থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন। দিনের চেয়ে রাতে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। গভীর রাতে অন্তত তিন-চারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে চট্টগ্রাম নগরে। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কিংবা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমোদন না থাকলেও নগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ২০ হাজার ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা। আর এসব রিকশা প্রতিদিন গিলে খাচ্ছে অন্তত ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে মাসোয়ারা পায় ট্রাফিক, থানা পুলিশ, বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় ব্যক্তিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ‘লোকাল’ উঠতি কিশোর গ্যাং লিডাররাও। এ কারণে এই খাতটি সংশ্লিষ্টদের কাছে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসে’ পরিণত হয়েছে। সরকারি বিদ্যুতেচালিত এসব অটোরিকশার আয় ব্যক্তির পকেটে গেলেও সরকার পাচ্ছে না কোনো রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনটি ব্যবহার হয় ১৩০ ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি দিয়ে, আবার কোনটি ২৩০ বা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি দিয়ে। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ একটি রিকশা চার্জের জন্য প্রতিদিন ২০০ টাকা আদায় করে থাকেন মালিকদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২০ হাজার অটোরিকশা বৈধ-অবৈধভাবে ব্যবহার করছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিট। সে হিসাবে দৈনিক ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসব অটোরিকশা অপচয় করছে। দিন-রাত পালাক্রমে চলা এসব রিকশা বা ইজিবাইক চার্জের জন্য ব্যবহার হচ্ছে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশ। অবৈধ বিদ্যুৎকে সিস্টেম বলা হলেও সাশ্রয়ে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মূলত এসব রিকশা আটকালেও ডাম্পিং করা হয় না। আবার নগরীর ১৬ থানা এলাকায় এ ধরনের প্রায় ২ শতাধিক গ্যারেজ রয়েছে, যেখানে দিনে দুইবার এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় লোকজনের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য দিয়ে এসব সংযোগ নেয় বলে জানা গেছে। কোনো কোনো গ্যারেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিংয়ের অভিযোগও রয়েছে। এ জন্য মাসিক মাসোয়ারা দেওয়া হয় বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্টদের।    

আর নিবন্ধনবিহীন এসব রিকশা চলাচল তদারকি করেন ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি’ নামক একটি চক্র। চাঁদাবাজির মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা রীতিমতো আঙুল ফুঁলে কলা গাছ বনে গেছেন। তবে রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে ২৭টি প্ল্যান্টের মধ্যে ২৫টি প্ল্যান্টের সক্ষমতা রয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ দশমিক ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের। বাকি দুটি প্ল্যান্টের উৎপাদনও নেই, সক্ষমতার কথাও উল্লেখ নেই। চালু থাকা প্ল্যান্টগুলোর সক্ষমতা ১ হাজার ৯৭৯ দশমিক ৭ মেগাওয়াট। আর প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদন ১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াটের মতো। অপরদিকে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এই হিসেবে প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে এ ঘাটতির কিছুটা সামাল দেওয়ার পরও দিনরাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এতে করে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর