বরিশালে সরকারি ডে-কেয়ার সেন্টারে পরম মমতায় বড় হচ্ছে পারিবারিক সমস্যাগ্রস্ত ৪৫ জন শিশু। যাদের মা কিংবা বাবা নেই, যাদের অভিভাবক কর্মজীবী বা বিভিন্ন সমস্যাগ্রস্ত- এসব পরিবারের ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের মাতৃ¯েœহে পালন করছে তারা। শিশুদের মানসিক বিকাশ, প্রাক-প্রাথমিক পড়াশোনা ও খেলাধুলাসহ পারিবারিক ¯েœহ-মমতা মিলছে মাত্র ১০০ টাকা মাশুলে। তবে সরকারি ছুটির দিনে এই সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন দিনমজুর শ্রেণির অভিভাবকরা।
ঝালকাঠি সদরের রনি সিকদার ফিরোজের স্ত্রী মারজান বেগম (২৪) ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেন। তাদের ঘরে তখন দেড় বছর বয়সের মেয়ে মরিয়ম এবং পাঁচ মাস বয়সের ছেলে নূর। স্ত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় ৪ মাস ১৮ দিন হাজতবাস করে মুক্ত হওয়ার পর শিশু দুটিকে রনির কাছে দেয় শ্বশুর পরিবার। সাড়ে ৩ বছরের মরিয়ম ও ২৩ মাস বয়সের নূরকে নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের ভাড়া বাসায় তালাবদ্ধ করে ভাড়া রিকশা চালাতেন রনি। কখনো শিশু দুটিকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটারি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় সমাজসেবা বিভাগের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজের। তিনি শিশু দুটিকে মধ্য জুলাইয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ডে কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন পরম মমতায় ডে কেয়ার সেন্টারে বেড়ে উঠছে মরিয়ম ও নূর। সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন ডে-কেয়ারে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় এখনো দুই শিশু সঙ্গে নিয়ে দুই দিন রিকশা চালান রনি সিকদার। তাদের মতো মাতৃহারা, পিতা-মাতা কর্মজীবীসহ নানা সমস্যাগ্রস্ত ৪৫ জন শিশু রয়েছে নগরীর বি এম কলেজের সামনে ১৯৯৬ সালে স্থাপিত সরকারি ডে কেয়ার সেন্টারে।
মরিয়ম ও নূরের বাবা রনি সিকদার ফিরোজ বলেন, উপায়হীন হওয়ায় শিশুদের বাসায় রেখে রিকশা চালাতেন। এখন প্রতিদিন সকাল ৯টায় তাদের সেন্টারে দেন, বিকাল ৪টায় বাসায় নিয়ে যান। মা না থাকলেও মাতৃ ¯েœহে বেড়ে উঠছে তারা। লেখাপড়া, খেলাধুলাসহ সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুক্র ও শনিবার ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ থাকায় ওই দুই দিন তাদের সঙ্গে নিয়ে রিকশা চালান তিনি। রং মিস্ত্রি জাফর মৃধা ও একটি ক্লিনিকের সেবিকা লিমা আক্তারের ছেলে ইয়াসিনকে (৪) ডে কেয়ারে সপ্তাহে পাঁচ দিন রেখে গত দেড় বছর ধরে কাজে যান তারা। শুক্র ও শনিবার শিশুকে সঙ্গে নিয়ে কর্মস্থলে যান লিমা। লিমা আক্তার বলেন, ওখানে শিশুদের খুবই যত্ন করে।