রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, নিদ্রাহীনতা ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তবে যথাযথ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দশ মাসে তিনজন এবং গত বছর পাঁচজন শিক্ষার্থী হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেন। অনেকে আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে এসেছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক অবসাদ ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মনোচিকিৎসক ড. তানজির আহমেদ তুষার বলেন, নানা কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এক্ষেত্রে অনলাইন আসক্তি অন্যতম। অকারণে সময় নষ্ট এবং প্রাপ্তির খাতায় শূন্যতা থেকে হতাশার সৃষ্টি। এ ছাড়া নিদ্রাহীনতা, অবসাদ, প্যানিক ডিসওর্ডার সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মানসিক চাপে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিজেকে নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নিতে অনেকে এ সমস্যায় ভুগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তথ্যমতে, এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত ৪০০ জন মানসিক সমস্যা নিয়ে এ কেন্দ্রে এসেছে। এদের মধ্যে ছাত্র ১৯৪, ছাত্রী ১৮২, শিক্ষক ১৭ ও কর্মকর্তা- কর্মচারী সাতজন। এ ছাড়া গত ছয় বছরে সেবা নিয়েছে ২ হাজার ২৩১ জন। যা শতকরা শিক্ষার্থীর ১০ শতাংশ। এদের মধ্যে ছাত্র ৯৮০, ছাত্রী ১ হাজার ১৪ জন, শিক্ষক ১১৪ ও কর্মকর্তা ১১৮ জন। এ কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৩৪টি সেবা প্রদান করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সমস্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং এই হার ঊর্ধ্বমুখী।
মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইমরুল কায়েস বলেন, গত ছয় বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিভিন্নভাবে কাজ চলছে। এখানে সেবা নিতে আসা ৫ হাজারের অধিক জনের একক ও যৌথ সেশন নেওয়া হয়েছে। এখন অনেকে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। এমনকি এখানে সেবা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসচেতনতামূলক সেমিনার এবং বিনোদনমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করলে এ সমস্যা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও হল কর্তৃপক্ষকেও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।