ইরি-বোরোর ভরা মৌসুমেই জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এদিকে চালকল মালিকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া ও ধানের দাম বাড়ায় চালের ওপর প্রভাব পড়েছে। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বেড়েছে।
জানা গেছে, ধান উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৬৯ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছিল। এ থেকে উৎপাদন হয় প্রায় ৪ লাখ সাড়ে ২২ হাজার মেট্রিক টন ধান। এই ধান থেকে চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন। এদিকে সপ্তাহখানেক আগেও বিভিন্ন হাটবাজারে রনজিত, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন মোটা চালের কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। এ ছাড়া ৫৬ টাকার জিরাশাইল ৬০ এবং ৬০ টাকার কাটারি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। পাশাপাশি সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা করে। হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে দিনমজুর ও স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীরা বেশি কষ্টে রয়েছেন। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকির দাবি তাদের। শহরের মাছুয়া বাজারে চাল কিনতে আসা শান্তিনগরের বাসিন্দা মনজুরুল ইসলাম বলেন, চাল কিনতে এসে দেখি সব ধরনের চালের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা কেজিতে বেড়েছে। যা আমাদের মতো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম বেশি হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনতে হচ্ছে।
একই এলাকার শামীম ইসতিয়াক নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার চালের দাম কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়, তা আমরা বাজারে এসে দেখতে পাই না। সরকার যেন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার সজিব নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের হঠাৎ করে দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কাউকে দেখা যায় না। প্রশাসনের উচিত খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা।
মাছুয়া বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা হুমায়ন কবির বলেন, ‘ধানের দাম বাড়ার কারণে মোকামে চালের দাম বেড়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারে ৩ থেকে ৫টা বেড়েছে চালের দাম। আমাদের তো ২-১ টাকা লাভ করতে হবে।’
চাল বিক্রেতা মিন্টু বলেন, এক থেকে দেড় সপ্তাহ আগে স্বর্ণা-৫ চাল ছিল প্রতি কেজি ৫১ টাকা। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ৫৬ টাকার জিরাশাইল ৬০ ও ৬০ টাকার কাটারি এখন ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ২৮ চাল আগে ৫৫ টাকা ছিল এখন তা ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জয়পুরহাট অবি অটো রাইসমিলের ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, হাটবাজারে সরবরাহ কমের কারণে ধানের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাল উৎপাদন করতে পারছেন না অনেক চালকল মালিকরা। তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাজারে চাল সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য ও কৃত্রিম সংকট যাতে তৈরি না হয় সেজন্য মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও বাজার মনিটরিং করছি। চালের বাজার নিয়ে সিন্ডিকেটের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।