রিমান্ডে নেওয়া নেতাদের রিমান্ড বাতিল ও নিখোঁজ নেতাদের জনসম্মুখে হাজির করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে এসে চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়। কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্তমাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সব সময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ও ভয়ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম-নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে যেসব তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো রোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থী, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেপ্তার অনেককে চার-পাঁচ দিন বা এরও বেশি সময় পর আদালতে নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্র-পত্রিকার তথ্যমতে, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতাকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের সব নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে। সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক নিহতের নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এবং গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। যা গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রিয়াদ ইকবাল এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গুম, নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের বারবার রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনা বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত। বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতাসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।