বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীতে গুলিতে দুজন নিহতের পৃথক ঘটনায় দুই মামলায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহের আদালত শুনানি শেষে তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ।
গুলি করে গৃহকর্মী লিজা আক্তার হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানায় করা মামলায় মোজাম্মেল হক বাবু ও শাহরিয়ার কবিরের এবং ফজলু নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে ভাসানটেক থানায় করা মামলায় শ্যামল দত্তের এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গত সোমবার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তসহ চারজনকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি চোরেরভিটা এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কারসহ আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। আটক অন্য দুজন হলেন- ৭১ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহবুব ও প্রাইভেট কারচালক সেলিম মিয়া। ওইদিনই ৩টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশ বিকাল ধোবাউড়া থানা থেকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ ছাত্র-জনতা। রাত ১১টায় তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়। এদিকে সোমবার রাতেই রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সকাল ৯টার দিকে এ তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী তাদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে থাকেন।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবিরের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করে। আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেককে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। লিজা হত্যা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর লিজা আক্তারের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমি অসুস্থ, হাঁটতে পারি না। হুইল চেয়ার ছাড়া আমি চলতে পারি না। আমি শতাধিক বই লিখেছি। কোথাও দেখতে পাবেন না যে, ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি। রিমান্ড দেবেন বা না দেবেন, আপনার ইচ্ছা।’
এরপর মোজাম্মেল বাবু কথা বলতে চাইলে আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আমার জয় বাংলা, জয় হিন্দ বক্তব্য ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত।’
এরপর শ্যামল দত্তের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। শ্যামল দত্ত আদালতকে বলেন, ‘আমি পেশাদার সাংবাদিক। ৩৭ বছর সাংবাদিকতা করেছি। ঘটনার সময় আমি ঢাকাতে ছিলাম না। সরকারের নির্দেশনা আছে, যাচাই-বাছাই না করে যেন সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা না হয়। তারপরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই রমনা থানাধীন এলাকায় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে লিজাসহ অনেক সাধারণ মানুষ আহত হন। গুলিবিদ্ধ লিজা আক্তার গত ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অন্যদিকে শ্যামল দত্তকে রিমান্ডে নেওয়া ফজলু হত্যা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হাজার হাজার জনতা বিজয় উদযাপন করতে বের হয়। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাসানটেক থানাধীন মিরপুর-১৪ নম্বরে ফজলু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় তার ভাই শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।