১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৩৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টায় শাহবাগ থানার অভ্যন্তরে মামলা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, গত ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এবং সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আইনি ব্যবস্থায় যাওয়া আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।
মামলা করতে অনেক দেরি হয়েছে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, মামলা করতে অনেক দেরি হয়েছে কারণ তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আসতে সময় লেগেছে। আমি মাহিন সরকার, একটি মামলা করেছি, এজাহার নেওয়া হয়েছে। সেখানে সর্বমোট ৩৯১ জনের নামসহ মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা দাখিল করা হয়েছে।
এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ ৩৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, আজকে আমরা মামলার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা দেশে চলমান থাকবে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা, উপজেলায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে মামলা করা হবে। যেই সন্ত্রাসী সংগঠন এখনো রাজপথে স্লোগান দেওয়ার দুঃসাহস দেখায় তাদের প্রতিহত করতে ছাত্র সমাজ প্রস্তুত রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার রূপরেখা দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের রূপরেখা দেব, রূপরেখা দেব দেশের রাজনীতি কীভাবে হবে, এবং রাষ্ট্রপতি কিভাবে পদত্যাগে করবেন।
আমরা রূপরেখা দেব বাহাত্তরের ফ্যাসিবাদী সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান তৈরির। আমরা মনে করি, আমাদের বিপ্লব তখনই সফল হবে, যখন ফ্যাসিবাদী সংবিধান বাতিল হবে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি তুললেও আওয়ামী লীগের বিষয়ে কেনো কিছু বলা হচ্ছে না জানতে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের জায়গা থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছি। জাতীয় রাজনীতির জায়গায় থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছি। আর কেউ যেন দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে না পারে আমরা সে দাবি তুলছি।
এ সময় সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব জায়গায় কেন তাদের থাকতে হবে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলতে শুধু নির্দিষ্ট দু-একজন না। সারা বাংলার ছাত্র সমাজই আমাদের অংশ। তারা এখানে নেই কিন্তু তারা অন্য কাজে আছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রায় তিনশোর ওপরে নাম উল্লেখ করে মামলা দিয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা মামলাও আছে। আমরা এজাহার গ্রহণ করেছি। এটি আপাতত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।