মাসখানেক আগেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে মেডিকেলের বন্ধ গেট পর্যন্ত সড়কের ছাতিম গাছের ফুলের গন্ধে বিভোর ছিলেন নগরবাসী। এখন সেই ছাতিম, কাঠগোলাপ ও রঙ্গন গাছের পাতায় ধুলার স্তর জমেছে। শুষ্ক মৌসুমে গাছের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন সড়কেরও একই অবস্থা। সড়ক সংস্কার, পাঁচটি স্থানে রেলওয়ের ওভারপাস নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধুলা। যার প্রভাব পড়ছে পথচারী, জনগণ ও রাস্তার পাশের দোকানপাটের বেচাকেনায়। ফলে নির্মল বায়ু ও ক্লিন সিটির গৌরব হারানোর ঝুঁকিতে আছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি নগরীর ছয়টি পয়েন্টে নমুনা পরীক্ষা করে বাতাসে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ ধূলিকণা পাওয়া গেছে। গত তিন বছরে বাতাসে ধূলিকণা বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। ফলে নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে নগরীর ছয়টি পয়েন্টে বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। সংস্থাটি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চালায়।
সংগঠনটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী নগরীর ২০২২ সালের ৫ মার্চ পরিমাপ করা হয় বাতাসের ধূলিকণার মাত্রা। ওই সময় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৭৬ এবং ৮৫ মাইক্রোগ্রাম, রেলগেট এলাকায় ৭৩ ও ৮৪ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠপুকুর এলাকায় ৫৬ ও ৬৮ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৭১ ও ৮০ মাইক্রোগ্রাম এবং সাহেববাজার এলাকায় ৫৫ ও ৬৬ মাইক্রোগ্রাম।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সংগঠনটি আবারও বাতাসের বায়ুদূষণের মাত্রা নির্ণয়ে সেই পাঁচ স্থানে পরিমাপ করে। এ সময় দেখা গেছে, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৯৭ এবং ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম, রেলগেট এলাকায় ৯৩ ও ২৩১ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠপুকুর এলাকায় ৭৬ ও ২২২ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৯৪ ও ২২৯ মাইক্রোগ্রাম এবং সাহেববাজার এলাকায় ৮৮ ও ২২৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
এ বছরের ৩০ নভেম্বর চালানো পরীক্ষায় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ১০৬ এবং ১৩০ মাইক্রোগ্রাম, রেলগেট এলাকায় ১২৫ ও ১৯০ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠপুকুর এলাকায় ৯০ ও ১১৭ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৬৪ ও ৯৩ মাইক্রোগ্রাম এবং সাহেববাজার এলাকায় ৭১ ও ১০৩ মাইক্রোগ্রাম। ফলে দেখা যায়, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৭৬ এবং ৮৫ মাইক্রোগ্রাম। রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘বায়ু পরীক্ষায় সব স্থানেই বায়ুর মান তুলনামূলক খারাপ পাওয়া গেছে। এ ধরনের বায়ু মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহী শহরে অনেক নির্মাণকাজ চলছে। এ কারণেও দূষণটা একটু বেশি। আমাদের পরীক্ষায় গত তিন বছরে প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি বায়ুদূষণ ধরা পড়েছে।’
এ ছাড়া ইউএনইপির ২০২২ সালের রিপোর্টে রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে দেখায়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমাণ দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল।
এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহরের পাঁচটি জনবহুল স্থানে দিনের বেলায় শব্দের মান নির্ণয় করে। এ বছরের ১২ অক্টোবর চালানো পরীক্ষায় এতে সর্বোচ্চ গড় শব্দ পাওয়া যায় নগরীর রেলগেটে ৯৬.৩০ ডেসিবেল এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৬.১০ ডেসিবেল নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে। তালাইমারী মোড়, বিসিক মঠপুকুর ও সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় শব্দের মান পাওয়া যায় যথাক্রমে ৮৮.৮০ ডেসিবেল, ৭৬.০০ ডেসিবেল এবং ৯০.৫০ ডেসিবেল।