নাটোরে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় করোনার কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, দিন দিন খারাপ হচ্ছে নাটোরের পরিস্থিতি। দেশের অন্যান্য জেলায় ছুটির দিনেও করোনা পরীক্ষা অব্যাহত থাকলেও নাটোরে না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি, ডেইলি স্টার ও একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা নাটোরবাসী হয়তো অন্যগ্রহের মানুষ, তাই সবসময় আমরা অবহেলা বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হলেও ছুটির দিন শুক্রবারে আমাদের নাটোরে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নাটোর হটস্পট হলেও পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘টকশোতে আলোচকদের বলতে শুনেছি, নাটোর এবং চাপাইয়ের সংক্রমণ বেড়ে গেছে! এখন সেখানকার লোকজন ঢাকায় আসা বন্ধ করা না গেলে ঢাকায় সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে! আরে ভাই, নাটোর, চাপাইয়ের লোক মারা যাচ্ছে! তাদের কীভাবে বাঁচানো যায় সেটা নিয়ে নয় বরং আলোচনা হচ্ছে তাদের কীভাবে ঢাকায় আসা বন্ধ করা যায়! নাটোর-চাপাই, নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের লোকেরা আমরা কি আসলে এই দেশের মানুষ?’
‘আমাদের হাসপাতালে কিছুই নেই, আইসিইউ, পিসিআর মেশিন, সিটিস্ক্যান, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার! এই দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, আমলারা আমাদের কথা ভাবে কখনও? একটা পিসিআর মেশিন, সিটিস্ক্যান মেশিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার এতগুলো মানুষের জীবনের চেয়েও মূল্যবান?’
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নাটোর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম নান্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মেহেরপুরের মতো একটি ছোট্ট জেলা যেখানে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,৮৮৮ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১,২৭৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৫ জন। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় রোগীর সংখ্যা ৫৫৭ জন। অথচ তাদের ১০০ বেডের জেনারেল হাসপাতালকে পুরোটাই কোভিড ঘোষণা করেছেন। সেখানের হাসপাতালে দুটি আইসিইউ বেড রয়েছে। রয়েছে আটটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। এ ছাড়া লিকুইড অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সত্তর লিটার সেকেন্ডে সাপ্লাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে করে সবকটি হাইফ্লো লোনাজল ক্যানোলা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। আর আমরা এমনই এক জেলায় বাস করি, যেখানে কিছুই নেই। নাটোর হাসপাতলে আইসিইউ-সিসিইউ নেই। একটিমাত্র হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না আইসিইউ বেড না থাকার কারণে।
হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন ক্যারেসমেটিক লিডার দরকার ছিল, কিন্তু করোনা চিকিৎসার বেসিক অক্সিজেন ও আই সি ইউ বেড দুইটার কোনোটাই করা সম্ভব হয় নাই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া সত্ত্বেও।
এভাবে শত শত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, করোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, আমাদের প্রচুর লোকবল সংকট, যা আছে তা দিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতেই আমরা ব্যস্ত। এছাড়া নাটোরে কোনো ধরনের হেলথ ইন্সটিটিউট নেই। কোনো ন্যাশনাল নার্সিং ইনস্টিটিউট নেই। কোনো ধরনের হেলথ বিষয়ে কোনো ডিপ্লোমার প্রতিষ্ঠান নেই। আমাদের সেই ব্যবস্থা নেই, যা সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের এই বিপদের দিনে আমরা কাজে লাগাতে পারি। নওগাঁ জয়পুরহাটসহ আমাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলাতে এসমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবং এই সমস্ত মেডিকেল ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্ন ছাত্রদের ল্যাবে ব্যবহার করা যায়।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, তবে আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের ছুটির দিনেও নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা শুরু করতে পারব ইনশাআল্লাহ। যেহেতু বিনা পয়সায় করনা পরীক্ষার বুথ চালু হচ্ছে সেহেতু আগামী সপ্তাহ থেকে ছুটির দিনেও যাতে নমুনা পরীক্ষা হয়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করব।
পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু হওয়া সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও নাটোর শহরসহ অধিকাংশ এলাকার সড়কগুলো ফাঁকা। নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে বিপণিবিতানসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভারী যানবাহন। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে নাটোরের প্রবেশপথে চেকপোস্টসহ কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেনা-বিজিবি ও র্যাব সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা প্রশাসনের একধিক মোবাইল টিম মাঠে রয়েছে। গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ৪২ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়। ৪২ মামলায় ৪২ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ