সংখ্যার দিক দিয়ে জাপানের শতবর্ষী মানুষেরা নতুন রেকর্ড গড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯,৭৬৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই নারী।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আগের বছরের তুলনায় এই বছর শতবর্ষীর সংখ্যা বেড়েছে ৪,৬৪৪ জন। টানা ৫৫ বছর ধরে জাপান প্রায় প্রতি বছরই শতবর্ষী মানুষের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড স্থাপন করছে।
বর্তমানে জাপানে সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি শিগেকো কাগাওয়া। কিওতো অঞ্চলের নারায় বসবাসরত এই নারী বর্তমানে ১১৪ বছর বয়সী। ৮০ বছর বয়সের পরও তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন এবং হাঁটতে হাঁটতে রোগীদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার অভ্যাসই তাঁকে আজও সতেজ রেখেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি বর্তমানে ব্রিটিশ নাগরিক ইথেল ক্যাটারহ্যাম। গত আগস্টে তিনি ১১৬ বছরে পা দিয়েছেন। এর আগে এই খেতাবটি ছিল জাপানের টোমিকো ইতোকার, যিনি ২০২৪ সালে ১১৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপ দীর্ঘায়ুর জন্য পরিচিত এবং বিশ্বের অন্যতম ‘ব্লু জোন’ হিসেবে পরিচিত। এখানে রোগের হার কম এবং মানুষের গড় আয়ু বেশি। ২০২২ সালে ওকিনাওয়ায় ১,২৭১ জন শতবর্ষী ছিলেন, যা প্রতি লাখে গড়ে ৬৮ জন। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বীপবাসীদের ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অন্য জাপানিদের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ওকিনাওয়া রিসার্চ সেন্টার ফর লংজেভিটি সায়েন্স’, যেখানে দীর্ঘায়ুর রহস্য নিয়ে গবেষণা চলছে।
অপরদিকে, দীর্ঘায়ু বাড়লেও জাপান জনসংখ্যা সংকটে পড়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় চিকিৎসা ও কল্যাণ ব্যয়ের চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে দেশটির জনসংখ্যা ৯ লাখের বেশি কমেছে, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন।
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এই পরিস্থিতিকে ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সংকট মোকাবিলায় নমনীয় কর্মঘণ্টা চালু, বিনা খরচে দিবাকালীন শিশুযত্ন এবং বিদেশি কর্মীদের আকর্ষণে নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি প্রবীণদের সেবায় দেশটিতে ‘কেয়ার রোবট’ ব্যবহারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতেও বার্ধক্যজনিত সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এক কোটির বেশি। ইতালিতে নবজাতকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পেনশনভোগী জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক