রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিস্তার ভাঙনে ছোট হচ্ছে বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

তিস্তার ভাঙনে ছোট হচ্ছে বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন

সব কিছু হারিয়ে নির্বাক নারী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন সংলগ্ন তিস্তা নদীতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে ক্রমেই ছোট হচ্ছে ইউনিয়নটি। গত ৩-৪ বছরে ওই ইউনিয়নের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তিস্তায় বিলীন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে তিস্তা গ্রাস করেছে ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর, ফসলি জমি। ভাঙনকবলিত অনেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, গত এক দশকে এই ইউনিয়নের এক-চতুর্থাংশ এলাকা নদীতে হারিয়ে গেছে। আগে এখানে ভোটার ছিল ২৯ হাজার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে। এগারোটি মৌজার মধ্যে সাতটি নদীগর্ভে চলে গেছে। বার হাজার ভোটার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। ভাঙন ঠেকাতে সরকারের কাছে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা চাই। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের লোকজন কালিরহাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে কাজ করছে। কেউ বাঁধ কেটে মাটি ভরলে তার আমাদের জানা নেই। আমরা চর থেকে নৌকায় বালু এনে কাজ করছি। ড্রেজারের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ভাঙন কবলিতদের পূণর্বাসনের জন্য সরকার কাজ করছে। আমরা ফিজিবিলিটি দেখে স্থায়ীভাবে কর্মসূচি গ্রহন করবো। সরেজমিন শনিবার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত চতুরা ও কালিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরের কয়েকটি বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। কখন ধসে যায় তা দেখতে উদাস চোখে তাকিয়ে আছে লোকজন। কালিরহাট এলাকার ঘরবাড়ি হারানো বৃদ্ধা সোহাগী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাপ-মায়ে আদর করি মোর নাম রাখছিল সোহাগী। স্বামীও চলি গেইল; সেইসঙ্গে সোহাগ-সুখও কাড়ি নিল তিস্তা।’ নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ (৬৩) নামে একজন বলেন, ‘বাবারে ২০ বার বাড়ি ভাঙছি। হামরা এ্যালা নিঃস্ব হয়া গেছি। হামরা পথের ভিখারী হয়া গেছি। সরকার হামারগুলার জন্য থাকবার জাগা করি দেউক।’ চতুরা হংসধর বাঁধের আহাম্মদ আলী জানান, রাত কাটে নির্ঘুম। ঘরের উঠোনে চলে এসেছে নদী। যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্ক আর উদ্বেগে সময় কাটছে পরিবারের লোকজনের।

 

 

সর্বশেষ খবর