গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার মধ্যে সাদুল্যাপুর উপজেলা শাকসবজি উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও তা বাজারজাতকরণে কৃষকদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। উপজেলা সদরে কোনো সরকারি আড়ত না থাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় এলোমেলো গড়ে উঠেছে আড়তের মতো কিছু চালাঘর। সেখানে কৃষকদের নানা রকম হয়রানি পোহাতে হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানে পণ্য প্রধান সড়কের পাশেই রেখে দেওয়ায় সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রাস্তায় পণ্যবাহী যানবাহন রেখে দেওয়া ও মালামাল উঠানামার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। যা নিয়ে উপজেলাবাসী ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। সাদুল্যাপুর উপজেলা সদরের প্রধান সড়কটির পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ১০/১২টি আড়তঘর গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার শাকসবজি কেনাবেচা হয়। সাদুল্যাপুরের বিভিন্ন হাটবাজার ছাড়াও গাইবান্ধা জেলা সদর, তুলশীঘাট, বালাসী, লক্ষ্মীপুর, দাড়িয়াপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতা। তবে কৃষকদের অভিযোগ আড়ত ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ফড়িয়া চক্র। চক্রটি আড়তে ঢোকার আগেই কৃষকদের কাছ থেকে তাদের নির্ধারণ করা কম দামে শাকসবজি কিনে নেন। আবার আড়তদাররাও ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে আদায় করে থাকেন। যা অন্য যে কোনো সরকারি আড়তের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আড়তে মিষ্টিকুমড়া নিয়ে আসা বিক্রেতা মিঠু মিয়া জানালেন, বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে সবজি পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। আড়ত ঘরগুলোতে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। টিনের ঘর ও মেঝে কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পণ্য মাটিতে রেখে তাদের মাটিতে বসেই পণ্য বেচাকেনা করতে হচ্ছে। আবার শৌচাগার না থাকায় হাজার হাজার মানুষ অসুবিধায় পড়েন। কিন্তু টোল আদায়কারীরা বেশি টাকা আদায় করে নেন। ‘দয়াল ভা-ার আড়ৎ’ মালিক ইয়াছিন আলী জানালেন, প্রতিদিন এখানে ভিড় লেগেই থাকে।
আড়ত মালিকরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা আদায় করেন। সরকারি না হওয়া সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদের মালিকানাধীন বাজারের ইজারাদার এখানে এসেও মণপ্রতি ১২ টাকা করে টোল আদায় করে নিয়ে যায়। ‘সততা ভা-ার’ আড়তের কর্মী ইয়াজল আলী বলেন, যদিও এখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার কেনাবেচা হয় কিন্তু আড়ত ঘরের মালিকরা সামান্য টাকা পান। এ জন্য পাকাঘর বা স্থাপনা করার সামর্থ্য তাদের নেই। সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খাজানুর রহমান বলেন, বরাবরই এ উপজেলায় শাকসবজির ভালো আবাদ হয়। উপজেলায় এবার রবি ও খরিফ মৌসুম মিলিয়ে আলু, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, হলুদ, টমেটোসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন। কৃষকরা এসব পণ্য স্থানীয় সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাট বাজারে বিক্রি করে থাকেন। সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নবী নেওয়াজ বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে এখানে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি বাজার নির্মাণ করার কথা আছে। তবে কোনো আড়ত বা হাট তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই।