সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ায় আমনের বাম্পার ফলন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় আমনের বাম্পার ফলন

কয়েক দিনের পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে আমন ধানের চারা। ধানের সবুজ কচি পাতায় ভরে গেছে বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমনের খেত। বাম্পার ফলন পাওয়ার আশায় বুকে আশা বেঁধে আছেন আমন চাষিরা। জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর ফলন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন চাষের চারা রোপণ করা শেষ হয়েছে। জানা যায়, চলতি বছর বগুড়ার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও শেষ পর্যন্ত বন্যা দেখা দেয়নি। যমুনা নদীর নিচু অঞ্চলগুলোতে কিছু পানি দেখা গেলেও বগুড়ার বেশিরভাগ এলাকায় তেমন কোনো বন্যার পানি দেখা যায়নি। বর্ষা ও শ্রাবণের বৃষ্টিতে নির্ভর করেই আমন চাষিরা এবার মাঠে নেমে পড়েন। বৃষ্টিপাত কম হলে বেশিরভাগ এলাকায় শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে আমন চাষ প্রায় শেষ করে এনেছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর বগুড়ায় করোনাভাইরাসের প্রভাব বেশি হলেও আমন চাষিরা থেমে নেই। ভালো ফলন পাওয়ার আশায় আমন চাষে মাঠে রয়েছেন। বগুড়ার সদর উপজেলা, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, গাবতলী ও শিবগঞ্জ উপজেলাসহ ১২ উপজেলায় আমন চাষ একেবারে শেষ দিকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবারও আমন চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন। গত বছর ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের পর মোট ফলন পাওয়া যায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরও ফলন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন চাষের চারা রোপণ করা শেষ হয়েছে। গত ১৫ জুলাই থেকে রোপণ শুরু হয়। বীজতলা তৈরি করা হয় প্রায় ১০ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে। এর বাইরে স্থানীয় কৃষকরাও বীজতলা তৈরি করেন। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের শ্যালো মেশিনচালক আছালত জামান জানান, রবি মৌসুমে জমিতে বেশি পানি সেচ দিতে হয়। এবার বন্যা না হওয়ায় বৃষ্টির পানি ও সেচ দিয়ে আমন চাষ চলছে।  সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন ধানখেতে কৃষকরা সারিবদ্ধভাবে ধানের জমির অপ্রয়োজনীয় আগাছাগুলো তুলে দিচ্ছেন। সার পানি ঠিক আছে কি না সেটিও পরীক্ষা করে নিচ্ছে।  সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কৃষক রাজু মিয়া জানান, জমিতে আগাছা কম থাকতেই তা তুলে দিতে হবে। তাছাড়া কয়েক দিন পর এগুলো আরও অনেক বেশি হয়ে যাবে। পরবর্তীতে এগুলো তুলতে এখনকার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কিষান খরচ হবে। সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের আমন মৌসুমে উপজেলার ২ হাজার ৬৫০ জন কৃষককে বিভিন্ন ধরনের আমন ধান চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় এ মৌসুমে বিভিন্ন প্রকল্পের ৪৮১টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বমোট ২৩ হাজার ৪১৩ জন কৃষককে বিভিন্ন ধরনের বীজ এবং সার কৃষিকার্ডের মাধ্যমে কৃষি                  প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী জানিয়েছেন, এ বছর উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর। চলমান অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকি জমিতে ধান চাষ শেষ হবে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল চালে ৩.২ টন। এ বছরও ভালো ফলন আশা করা যাচ্ছে।  বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সারিয়াকান্দি জোনাল অফিসের সহকারী জোনাল ম্যানেজার সামছুল হক জানিয়েছেন, আমন ধানের জমিতে পানিসেচ দিতে উপজেলার সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।  সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, পানিসেচ দিয়ে হলেও কৃষকরা এ বছর ব্যাপক পরিমাণে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। ধানের চারাগুলো সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং অসময়ে বন্যা না হলে এ বছর কৃষকরা বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর