রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন প্রকল্পে বদলে যাবে সুন্দরবন

♦ নির্মাণ হবে নতুন চার ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ♦ খনন ও পুনঃখনন করা হবে ৮৪ পুকুর

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

তিন প্রকল্পে বদলে যাবে সুন্দরবন

জীববৈচিত্র্যের বৃহত্তম আধার বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) এলাকা সুন্দরবন। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারে। যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ এক শ্রেণির ক্ষমতাবান অসৎ মানুষের কারণে এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। এ অবস্থায় দেশের অক্সিজেনের ভান্ডার সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় ১৮৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে তিনটি প্রকল্প।  চলমান প্রকল্প তিনটি হচ্ছে নতুন ৪টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ, ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প ও সুন্দরবনে বাঘসহ বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৪টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে সুন্দরবন।  প্রাণ-প্রকৃতিসহ অবকাঠামোগত সমস্যার বহুলাংশের সমাধান হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। নতুন চার ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ : সমগ্র সুন্দরবনের ওপর ইকোট্যুরিস্টদের চাপ কমানোসহ এই ম্যানগ্রোভ বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন ৪টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলা রেঞ্জের আলিবান্ধা, চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগীতে নতুন ৪টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনে প্রতিবেশ পর্যটন বা ইকোট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে এসব কেন্দ্রে সাড়ে ৬ হাজার বর্গমিটারের একটি আরসিসি ফুট ট্রেইল, একটি ইন্টারপ্রিটেশন ও ইনফরমেশন সেন্টার ও সাতটি স্যুভেনির শপ নির্মাণ, বন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইকোট্যুর অপারেটর, গাইড কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৬০০ সদস্যকে প্রশিক্ষণ, স্থানীয়দের পাশাপাশি স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ ৭টি ফাইবার বডি ট্রলার, ৩টি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে, ৩ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, পাবলিক টয়লেট, সাড়ে ৮ হাজার ঘনমিটার পুকুর খনন, প্রদর্শনী ম্যাপ শেড, আরসিসি বেঞ্চ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া গাইডম্যাপ, পর্যটকদের জন্য ১০টি পথ নির্দেশনা ও ঝুলন্ত সেতুসহ অন্য অবকাঠামোও গড়ে তোলা হবে। নতুন ৪টি কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ হলে সুন্দরবনে ১১টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১টিতে। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প : সুন্দরবন সুরক্ষা  নামের বড় এই প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে সুন্দরবনের দুবলা, ককিলমুনি, শ্যালা, কচিখালী, চরখালী, তাম্বুলবুনিয়া, জোংড়া ও ঝাপসি টহল ফাঁড়িসহ ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বন অফিসে আরসিসি ভবন, পন্টুন ও গ্যাংওয়ে নির্মাণ, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন সন্নিহিত এলাকায় পলি পড়ে ভরাট হওয়া বাইন্ডারী নদী-খাল পুনঃখনন করা হবে। সুন্দরবনের পানি, মাটি, বৃক্ষরাজি ও বন্যপ্রাণীসহ প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে ইকোলজিক্যাল মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি এসব নিয়ে করা হবে উচ্চতর গবেষণা। খুলনায় সুন্দরবন বিভাগের অফিসে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সিস্টেম বা জিআইএস ল্যাব। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি একনেকে পাস হওয়া এই প্রল্পটির কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হলে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির হালনাগাদ চিত্র উঠে আসবে। সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও লবস্টার, সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ীসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি সুরক্ষায় দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বন বিভাগ। ৮৪ পুকুর খনন ও পুনঃখনন : লবণাক্ত জলাভূমির সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বনজীবী ও পর্যটকদের খাবার পানির জন্য ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮০টি পুনঃখনন করা হচ্ছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এসব পুকুরের মধ্যে ৭০টিতে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকাঘাট। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকায় এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে।

সর্বশেষ খবর