রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের দাওয়াত দিলেন হতদরিদ্র মানুষ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ঈদ উপলক্ষে ভূমিসহ গৃহপ্রাপ্তরা নতুন ঘরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে চান। প্রধানমন্ত্রীকে তারা তাদের সঙ্গে নতুন ঘরে বসে সেমাই আর ডাল-ভাত খাওয়াতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যিনি ঘর দিয়েছেন সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েই নতুন বাড়ি পাওয়ার আনন্দে ঈদের বিকালটি কাটাতে চান ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাফই কাইচাইল ভূমিসহ গৃহপ্রাপ্তরা। এ আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পর এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ফরিদপুরের নগরকান্দায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ভূমি ও গৃহহীনদের ভূমিসহ গৃহ প্রদান করা হচ্ছে। নতুন করে ১১০টি পরিবার পাচ্ছে এ বাড়ি। একই সঙ্গে জেলার মধ্যে নগরকান্দা উপজেলা ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে। এর আগে এ উপজেলায় আরও ৩৫০টি পরিবার জমিসহ ঘর পেয়েছে। এদিকে জেলায় ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার পরিবার ভূমিসহ গৃহপ্রাপ্তের আওতায় এসেছে। ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, আগামী ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি জেলার নগরকান্দা উপজেলার কাফই কাইচাইল এলাকায় জমিসহ নবনির্মিত গৃহ হস্তান্তর করবেন।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কাফই কাইচাইলের নবনির্মিত বসতি এলাকায় বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মিস্ত্রিরা। আর ঘরপ্রাপ্তির তালিকায় থাকা অনেকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে শান্তির পরশ। নিজের বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরের বারান্দায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুজিববর্ষের লোগোযুক্ত ঘরের নেমপ্লেটের দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকা একজন হলেন জাকির হোসেন। তিনি জানালেন, পরিবার নিয়ে ১৪ বছর যাবৎ থাকেন উপজেলার কাইচাইল এলাকায় শ্বশুর আফসার মাতুব্বরের বাড়িতে। নিজের কোনো জমি বা বাড়ি নেই। স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে সেখানেই তাদের দিনাতিপাত ঘটে। এবার ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জমিসহ নতুন ঘর দিয়েছেন। এলাকার পোড়াদিয়া বাজারের বটতলা ফুটপাথের চা বিক্রেতা জাকিরের এবারের ঈদ নিজ বাড়িতে হবে বলে খুব খুশি। বলেন, ‘আমার পোলাপান নিয়ে নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে ঈদ করুম। যে ঘর দিছে, সেই প্রধানমন্ত্রীরে নিয়ে ঈদ করবার চাই। সিমাই আর একমুঠ ডাল-ভাত তাকে আমাগের ঘরে বসায়ে খাওয়াব্যের চাই।’ স্বামী পবিত্র মালোকে নিয়ে মাঝিকান্দায় চাচা শ্বশুর উত্তম মালোর বাড়িতে থাকেন বাসন্তী রানী (৪৫)। তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন; অপর দুই মেয়ের একজন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। অপরজন পুরদিয়া স্কুলে পড়ে। স্বামী মাছ ধরে বিক্রি করেন। নিজের বাড়ি না থাকায় মেয়েদের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন বাসন্তী। এবার সেই দুশ্চিন্তা দূর হবে বলে জানালেন তিনি। কাঠমিস্ত্রি নূরে আলম। ‘দিন আনি দিন খাই’ অর্থনৈতিক অবস্থা থাকলেও বড় কষ্টের বিষয় ছিল নিজের বাড়ি না থাকা। বলেন, ‘যারা নিজের বা পৈতৃক বাড়িতে থাকে তারা কোনোদিনও পরের বাড়ি থাকার দুঃখটা বুঝবে না। তিনি আরও বলেন, ঈদের দিনে বাচ্চাদের মুখে দুই চামচ সেমাই তুলে দিতে পারি ঠিকই, কিন্তু ‘মাইনসের বাড়ি থাহে, নিজির বাড়ি নাই’ এই কথা শুনতি খুবই খাবার লাগত। নিজেরে খুব ছোট মনে হতো। মনটা সব সময় মরা থাকত। সবাই দেখতেছে ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জমি দিছে- ঘর দিছে। কিন্তু সে শুধু এগুলাই দেয় নাই, প্রধানমন্ত্রী আমাগো মনটা বড় করে দিছে। এখন বুক ফুলাইয়ে বলতি পারব নিজের বাড়ি থাকি; মানইসের বাড়ি থাকি না। তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ নতুন ঘরে আসবেন, আমার বাচ্চাদের সঙ্গে একটু সেমাই খাবেন এটাই চাই। এলাকার জমিসহ নতুন ঘরপ্রাপ্ত জান্নাতি আক্তার, সোহবারসহ বাসিন্দারা আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে, ঈদের উপহারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন একটু সময় করে তাদের আনন্দের ভাগিদার হন।

সর্বশেষ খবর