সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর লোকবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলার একমাত্র হাসপাতালটি। সুইপার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া না থাকায় হাসপাতালটিতে নোংরা ও দুর্গন্ধ লেগেই আছে। ফলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গাইনি, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, শিশু, ডেন্টাল ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। অপারেশন থিয়েটার রুমে তালা ঝুলছে। ডাক্তার না থাকায় অপারেশন করতে আসা মুমূর্ষুরা ফিরে গিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন। মানসম্মত সেবা না থাকায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট তালা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এখানে পদায়নকৃত ৩৩ পদের বিপরীতে ডাক্তার আছেন মাত্র ১৭ জন। দুর্বল চিকিৎসাসেবা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। ইকো ও সিটিস্কান মেশিন নেই। ফলে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত রোগী ফিরে যাচ্ছেন। এমএলএসএসের দুটি ও একটি স্টোর কিপারের পদও শূন্য। লোকবলের অভাবে অতিরিক্ত আউটসোর্সিংয়ের লোকবল দিয়ে কোনোভাবে চলছে কার্যক্রম। করোনার উপসর্গ নিয়ে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। এখনো চালু হয়নি হাসপাতালের সেন্ট্রাল এসি। হাসপাতালের সংস্কার কাজে ধীরগতি থাকায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের রোগীরা ফ্যান চালাতে পারেন না। সব সময় ফ্যান বন্ধ থাকায় ভ্যাপসা গরমে রোগীরা ছটফট করছেন। বেড না থাকায় রোগীরা মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় নার্সরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এ ছাড়া জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন পদে পদে। মানসম্মত চিকিৎসা পাচ্ছেন না তারা। ফলে সরকারি এ হাসপাতালে কোনো না কোনো ভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তালাসহ ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। সরেজমিন দেখা গেছে ডাক্তার না থাকায় তালা ঝুলছে অপারেশন থিয়েটার রুমে। সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় অপারেশন থিয়েটারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। বাধ্য হয়ে রোগীরা বাইরের ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে বাড়তি টাকা গুনছেন। পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্থানে রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে হাসপাতালটি নোংরা ও আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। এ হাসপাতালে নার্সেরও একটি পদ শূন্য। জরুরি বিভাগে অধিকাংশ সময় ডাক্তার পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। প্যারামেডিকেলের পাঁচ ডাক্তার পদও শূন্য। একজন দন্ত চিকিৎসক থাকলেও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় শুধু দাঁত ওঠানো ছাড়া অন্য চিকিৎসা করা হয় না। চিকিৎসাধীন রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থাও খারাপ। ওয়ার্ডের বেডগুলো অস্বাস্থ্যকর। সরবরাহকৃত খাদ্যও অত্যন্ত নিম্নমানের। তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সরদার জানান, পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। এ মহূর্তে শূন্যপদে ডাক্তার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন। চিকিৎসক সংকট দূর হলে মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে। সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।