বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এক যুগ পর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু

ফেনী প্রতিনিধি

এক যুগ পর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু

ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘ এক যুগ পর চালু হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিমুখী বাণিজ্য। গত সোমবার দুপুরে ১৫ মেট্রিক টন ভারতীয় পিঁয়াজের চালান বাংলাদেশে আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিমুখী বাণিজ্য। এতে উচ্ছ্বসিত আমদানি-রপ্তানিকারকসহ শ্রমিকরা। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সেঁতারা করপোরেশন নামীয় আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার ১৫ মেট্রিক টন পিঁয়াজের প্রথম চালান আমদানি করেছেন। দুপুরে ভারতীয় পিঁয়াজবাহী ট্রাক বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করলে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমদানি-রপ্তানিকারক, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, স্থলবন্দরের লোডিং-আনলোডিং কর্মীরা স্বাগত জানান। পিঁয়াজের ট্রাক পরিদর্শন করেন বিলোনিয়া স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আল আমিন ভূঁঞা, বিলোনিয়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের পুলিশ কর্মকর্তা ইমাম হোসেন, মজুমদারহাট বিজিবি ক্যাম্পর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ফেনীর বিলোনিয়া শুল্কবন্দর, ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল। স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে সব মিলিয়ে ১০-১৫ ট্রাক শুঁটকি আমদানি করা হয়েছিল এ বন্দর দিয়ে। তবে আমদানির অনুমতি না থাকায় পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী দ্বিমুখী বাণিজ্য চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বলে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের কুমিল্লা কমিশনার মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ বন্দরে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। স্থলবন্দরটিতে বর্তমানে একজন ল্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তা, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড রপ্তানি হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে গবাদিপশু, মসলা, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পিঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সেঁতারা করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার জানান, তার পিঁয়াজবাহী ট্রাক গত রবিবার রাতে ভারতের বিলোনিয়াতে এসে পৌঁছায়। তিনি জানান, এ বন্দর দিয়ে আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ায় প্রথমে একটি পিঁয়াজের চালান দিয়ে তা উদ্বোধন করেছেন। ভবিষ্যতে বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে বৃহৎ পরিসরে সব ধরনের পণ্য আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। আমদানিকারকরা জানান, অবকাঠামোর দিক থেকে এ স্থলবন্দর পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। এ কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য তেমন আগ্রহী হয়ে উঠছে না।  বিলোনিয়া স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম জানান, এ বন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্যে চালু করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন।

এ অঞ্চলের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটার পাশাপাশি আমদানি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি লাভবান হবে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আল আমিন ভূঁইয়া জানান, প্রথম চালানে ১৫ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া এ বন্দর দিয়ে তাদের আমদানি রপ্তানি করতে পারবেন। দ্বিমুখী আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চললে বন্দরের পরিপূর্ণতা আসবে। ইতোমধ্যে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি শুরু হওয়াতে আবারও আমদানি রপ্তানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে ব্যবসার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

 

সর্বশেষ খবর