পঞ্চগড়ে সীমান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গরু। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন খামারি এবং কৃষক। গত এক মাসে কয়েক শ গরু মারা গেছে জেলার সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। লাম্পি স্কিন রোগ বাড়লেও প্রাণিসম্পদ অফিসের নেই তেমন কোনো তৎপরতা।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এক মাস আগে দেখা দেয় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের ২৪ গ্রামে এখন পর্যন্ত ১৫০-২০০ গরু এ রোগে মারা গেছে। বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ৬৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে লাম্পি স্কিন রোগে। রোগটি এখন ইউনিয়ন ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। প্রতিদিনই গবাদি পশু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার অন্য উপজেলাগুলোয়ও বেড়েছে এ রোগ। শুরুতে সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি গুটি উঠছে। তারপর পায়ের হাঁটু গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় জমছে পানি। জ¦র ও প্রচ- ব্যথায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয় আক্রান্ত গরুগুলো। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউ কেউ আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা রাখছেন। তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। দুই বছরের কম বয়সের গরু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। খামারি ও কৃষকদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে ফি দিতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় তারা ডাকে সাড়া দেন না। নিরুপায় হয়ে তারা গ্রামের পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। গরু প্রতি খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। লাম্পি স্কিন ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও প্রাণিসম্পদ অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো নজরদারি নেই। কৃষক ও খামারিরা এলাকাভিত্তিক জরুরি চিকিৎসা ক্যাম্প চালুর দাবি জানিয়েছেন। বড় দলুয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, আমার ২ লাখ টাকা মূল্যের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হাজার চেষ্টা করে অফিসের কোনো লোক পাইনি। প্রাণিসম্পদ অফিসের ডাক্তারদের কল করলে তারা ১ হাজার টাকা ভিজিটের কমে আসেন না। আমরা সরকারি কোনো ওষুধও পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে গ্রামের পশু ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্তু তারপরও কাজ হচ্ছে না। তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, এখানে লাম্পি নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে কোনো গরু আক্রান্ত হয়নি। খামারিদের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা দিন-রাত কাজ করছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো আগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে আমাদের লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহিম জানান, এখন শীতকাল। এ রোগ কমে আসবে। মহামারি আকার এখনো ধারণ করেনি। আমাদের কোনো কর্মচারি বা ডাক্তার টাকা পয়সা নেন না। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।