কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে প্লাস্টিকের আবর্জনায় নির্মাণ করা হয়েছে এক অদ্ভুত দানব। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নমুনা প্রদর্শনী হিসেবে এ প্লাস্টিক দানব তৈরি করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় এ প্লাস্টিক দানবটি বৃহস্পতিবার থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের ফেলা ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব। চিপসের প্যাকেট থেকে শুরু করে প্লাস্টিক বর্জ্য, কাচের বোতল, ছেঁড়া জুতা, ছেঁড়া জালসহ নানা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলায় নষ্ট হচ্ছে সাগর ও সৈকতের পরিবেশ। ফলে সৈকত দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে। আর হুমকির মুখে পড়েছে সাগরের জীববৈচিত্র্য। এসব পরিত্যক্ত বর্জ্য সংগ্রহ করে সচেতনতার লক্ষ্যে এ বিশালাকৃতির প্লাস্টিক দানব তৈরি করা হয়েছে। ১৬ স্বেচ্ছাসেবক সাত দিন ধরে এ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন। বালিয়াড়িতে দণ্ডায়মান দানবের পাদদেশে ময়লা-আবর্জনা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দানবটি প্রদর্শনের পর থেকে সেখানে নানা বয়সের পর্যটকরা ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। তারা জানান, সৈকতের বালিয়াড়িতে তৈরি করা বিশাল আকৃতির এ প্লাস্টিক দানব সবার মাঝে সচেতনতা বাড়াবে। বেড়াতে এসে বর্জ্য ফেলে আমরা যে সৈকতকে দূষিত করি, সে দৃশ্যই তুলে ধরা হয়েছে এ প্লাস্টিক দানবের মাধ্যমে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে এটি আমাদের সচেতনতার জন্য ভালো কাজ হয়েছে। প্লাস্টিক দানব তৈরির মূল পরিকল্পনাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী আবির কর্মকার বলেন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্রসৈকত থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সাত দিন ধরে দিন-রাত কাজ করে এ দানব তৈরি করা হয়েছে। এর উচ্চতা ৩৮ ফুট ও প্রস্থ ১৪ ফুট। সমুদ্র ও সৈকতে প্লাস্টিক রোধে মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতেই এ দানব তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক আকরাম হোসেন শাহীন বলেন, প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবার মাঝে সচেতনতা বাড়াতে চলমান পরিবেশ দূষণবিরোধী ক্যাম্পেইনে সংগৃহীত প্লাস্টিক দিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে এ দানব তৈরি করেছি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য আমরা যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ পরিবেশ তৈরি করছি।
বিশেষ করে সমুদ্রসৈকত এলাকায় অতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। সমুদ্রকে রক্ষা করতে পারলে, রক্ষা হবে পরিবেশ ও প্রকৃতি। তাই যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারে পর্যটকসহ সবার প্রতি সচেতনতা বাড়াতে প্লাস্টিক দানব তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা অনুকূল বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ, বিনামূল্যে শিক্ষা কর্মসূচি এবং এক টাকায় চিকিৎসাসহ বেশ কিছু নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।