বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন, আতঙ্কে কৃষক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন, আতঙ্কে কৃষক

বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমি খনন করে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। কোথাও আবার কৃষি জমি ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে কৃষি এলাকা বলে খ্যাত বগুড়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। জানা যায়, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষিপ্রধান জেলা। কৃষিপ্রধান জেলা বগুড়ায় ধান, পাট, আলু, গম, পিঁয়াজ, কলা, বেগুনসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। জেলা সবজি উৎপাদনে প্রতি বছর রেকর্ড সৃষ্টি করে। এক মৌসুমে ইরি বোরো ছাড়াও বর্ষালি ধান চাষ হয়। কৃষিকাজের জন্য আদর্শ মাটি হওয়ায় বগুড়ায় ফলন হয় সারা বছর। জেলায় মরিচ চাষে যেমন সুনাম রয়েছে তেমনি আলু উৎপাদনেও রেকর্ড গড়েছে। ঢাকার বেশির ভাগ কাঁচা বাজারের বড় চালান দিয়ে থাকে বগুড়ার কৃষকরা। কৃষিতে সফলতা থাকলেও বাধ সেধেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। এ প্রভাবশালীরা বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন শুরু করেছে। কোথাও আবার মাটি ভরাট করে কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে প্রতিষ্ঠান। যে কারণে কৃষি জমি কমে যেতে শুরু করেছে। এভাবে কৃষি জমিতে একের পর এক নির্মাণকাজ হলে কৃষি জমি কমে উৎপাদনে ব্যাহত হতে পারে। জেলার কাহালুতে প্রভাবশালী মহল সরকারি আইন উপেক্ষা করে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন এবং ওই মাটি দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের নামে ভরাট করা হচ্ছে হাজার হাজার একর জমি। ফলে জ্যামিতিক হারে প্রতি বছর হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি। কৃষি অফিস বলছে, পাঁচ বছর আগে কাহালু উপজেলা কৃষি জমির পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ হাজার হেক্টর, বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টরে। পাঁচ বছরে পুকুর খনন ও ভরাটে নষ্ট প্রায় ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে উপজেলাব্যাপী চলছে কৃষি জমি খনন ও ভরাটের মহাৎসব। খরা মৌসুমের শুরুতেই উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন, ভরাট, নাগর নদীর বাঁধ থেকে মাটি কাটা, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে স্কেভেটরসহ মাটি কাটার সরঞ্জামাদি ও পরিবহন কাজে ব্যবহৃত ট্রাক এবং ট্রাক্টর জব্দ করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানাও করেন। তার পরেও কাহালু উপজেলাব্যাপী চলছে কৃষি জমি খনন ও ভরাটের কাজ। এক শ্রেণির ব্যক্তিরা কৃষি জমির মালিকদের কৃষি জমির চেয়ে পুকুর বেশি লাভজনক এ কথা বুঝিয়ে পুকুর খনন করে দিচ্ছেন। এর পর একটি প্রভাবশালী মহলকে মেনেজ করে যেন-তেনভাবে পুকুরের পাড় দিয়ে অবশিষ্ট মাটি পুঁজিপতি কল-কারখানা মালিকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে দেন। তারা রাতের আঁধারে স্থাপনা নির্মাণের নামে কৃষি জমিগুলো ভরাট করছে। অনেক স্থানে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের পানি নিষ্কাশনের নালা, ব্রিজ-কালভাট ভরাট ও বন্ধ করে দিয়েছে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বড় বড় জনবহুল রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা না রেখেই পুকুর খনন করায় দুই তিন বছরের মধ্যেই তা ভেঙে রাস্তাগুলো পুকুরের মধ্যে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। এদিকে রাস্তা সংস্কারের নামে প্রতি বছর সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বড় বড় ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের কারণে ব্রিজ-কালভাট ও গ্রামীণ ইট সোলিংয়ের রাস্তাসহ পাকারাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বগুড়ার ধুনটে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করায় মাটি ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২৫ ডিসেম্বর বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত এ জরিমানা ঘোষণা করেন। ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের ফড়িংহাটা গ্রামের কৃষি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করছিল এক ব্যক্তি। সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি খননের একটি এস্কেভেটর মেশিন ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষ স্বীকার করায় নুরুল ইসলাম নামে একজন মাটি ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া জেলার নন্দীগ্রাম, শেরপুর আদমদীঘি উপজেলাতেও কৃষি জমিতে পুকুর নির্মাণসহ ভরাটের কাজ চলছে। এভাবে ভরাট হতে থাকলে কৃষি জমি কমে কৃষি উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।

সর্বশেষ খবর