বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুনাফা দূর কথা, আলু বেচে আবাদ খরচও উঠছে না

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

মুনাফা দূর কথা, আলু বেচে আবাদ খরচও উঠছে না

গত বছর প্রথম দিকে ভালো দাম পাওয়ায় এবার লালমনিরহাটের কৃষকরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ শুরু করেন। কিন্তু আলুর বর্তমান বাজার দরে লাভ তো দূরের কথা খরচও তুলতে পারছেন না তারা। ধারদেনা করে আলু আবাদ করে তাদের কাঁধে এখন বড় বোঝা। ফলে হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। এক কেজি চাল কিনতে ৬ থেকে ৭ কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে, লাভ তো দূরের কথা খরচই উঠছে না। কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের বড়বাড়ি গ্রামের আলু চাষি সহিদুল ইসলাম। ধারদেনা আর লোনের টাকায় আলু আবাদ করে তিনি এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। ভরা মৌসুমেও দাম নিয়ে হতাশ আলু চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আলু আবাদ হওয়া এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আলু রাখার অধিক পরিমাণে হিমাগার না থাকায় কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে মনে করেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান। সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আলু চাষি রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আলু করেছি আমি। এখন বাজার দর অনেক খারাপ। মাঠে ৯ টাকা থেকে সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, খরচও উঠবে না। প্রতি কেজি আলু চাষ করতে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ টাকা। এ অবস্থায় বড় লোকসানে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। প্রতি বছর কমপক্ষে তিন থেকে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করতেন আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ির  কৃষক নূর ইসলাম। আলু তুলে রাখতেন কোল্ড স্টোরেজে। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে আলুর দাম না থাকায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু উঠাননি। সব মিলিয়ে গত বছর ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছিলেন। গত মৌসুমের লোকসান কাটাতে এবারও আলুর চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি, এবারও গুনতে হচ্ছে লোকসানের হিসাব। শুধু নূর ইসলামই নন, গত বছরের লোকসান কাটিয়ে তোলা এবং ভালো দাম পাওয়ার আশায় এবারও আলু রোপণ করেছেন জেলার অনেক কৃষক। গত মৌসুমের চেয়ে এবার উৎপাদনও হয়েছে বেশ। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ এই জেলার কৃষকেরা। জেলার দুরাকুটি হাটে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষকেরা জানান, বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গ্রানোলা আলু ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, রোমানা পাকরি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বট পাকরি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলন হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম প্রতি মণে কমে গেছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। দিন দিন দাম কমে যাওয়ায় যারা আলু তুলছেন, তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজারে আলুর দাম নিয়ে অনিশ্চয়তায় পাইকারি ক্রেতারাও। পাইকারি ক্রেতা বাবু বলেন, ‘বাজারে এখন আলু বেশি। কৃষকেরা প্রায় সবাই আলু তুলছেন। এসব আলু ঢাকা, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচাবাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। এক সপ্তাহ পরে আলুর দাম বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে।

 লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল হামিদ বাবু বলেন, ‘এই জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু কৃষকরা আলুর দাম পান না। আমি মনে করি, সরকারিভাবে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং আলু দিয়ে তৈরিকৃত খাদ্যদ্রব্য কারখানা স্থাপন জরুরি। তাহলে আলুর ব্যবহার বাড়বে এবং আলুর খাদ্যদ্রব্যও পাওয়া যাবে এই এলাকায়। সে ক্ষেত্রে আলুর বাজার দরে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, ‘জেলায় এবার ৩৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর