শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রামুতে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে হাজার হাজার কৃষক

বাঁকখালী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকের হাহাকার বেড়েছে

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

রামুতে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে হাজার হাজার কৃষক

কক্সবাজারের রামুর খরস্রোতা বাঁকখালী নদী শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। নদী দেখে বোঝার উপায় নেই এটা নদী না ফসলের মাঠ। অন্যদিকে পানির অভাবে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার একর জমিতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। রামু উপজেলার সচেতন নাগরিকরা জানান, গর্জনীয়া, কচ্ছপিয়া, সোনাইছড়ি, ছাকঢালা, চেরারকুল, বাঁকখালী নদীর ওপরে শাখা নদীগুলোতে বেড়িবাঁধ, একাদিক স্থানে রাবার ড্রেমে পানি ধরে রাখছে। বাঁকখালী নদী থেকে তামাক চাষিরা পানি তুলে নিচ্ছে কয়েক হাজার নিজেদের পানির মেশিন দিয়ে এবং একাদিক স্থানে বালি উত্তোলন করতেছে। পানির প্রবাহ না থাকায় শুকিয়ে গেছে রামুর বাঁকখালী নদী। যার ফলে সেচের অভাবে রামু উপজেলায় কয়েক হাজার একর জমি। ফতেখাঁরকুল পূর্ব মেরংলোয়া এলাকার কৃষক নাজির হোসেন কালু জানান, আমার জমি তিন ফসলি আলু, টমেটো ঘরে তুলছি এখন একটু একটু পানি দিয়ে ধান রোপণ করছি এখন আর পানি পাচ্ছি না ধানের চারা পানির অভাবে মরে গেছে মাটি শুকিয়ে পেটে গেছে। এখন আমি খাব কী মানুষদের কী খাওয়াব। তামাক চাষিরা পানি পাচ্ছে ধান চাষিরা পানি পাচ্ছে না। কৃষক মমতাজ উদ্দিন জানান, বেসরকারি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রতি বছর ধান, আলু, মরিচ, শিম, পিঁয়াজ চাষ করি। আমার আয়ের আর কোনো উপার্জন নেই আমার তিনটা মেয়ে সংসারের আয়ের একমাত্র উৎস চাষ করে খাওয়া মেয়েদের খরচ জোগাড় করা। আমার প্রথম মেয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজে অর্নাসে পড়ে দ্বিতীয় মেয়েটা এবারে রামু উচ্চবালিকা থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন রত, ছোট মেয়েটা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়তেছি রাতে ঘুমালে ঘুম আসে না টেনশনে। মেরংলোয়ার গ্রামের কৃষক মকতুল হোসেন ও কবির হোসেন জানান, আমরা কৃষকরা খুব চিন্তিত পানি না পেয়ে জমি খালি পড়ে আছে জমির মালিক কে জমির লাগিয়ত বাবদ টাকাও দিয়েছি। এখন ধানও ঘরে তুলতে পারব না কিছু জমিতে মরিচের চারা রোপণ করছি পানির অভাবে তাও মরে যাচ্ছে যেগুলো ধরছে সেগুলো ও চিকন চিকন হয়েছে মাটি ও পেটে গেছে। কক্সবাজার জেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি নেজাম উদ্দিন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি নিষিদ্ধ তামাক চাষ, একাদিক স্থানে ড্রেজারের আধিপত্য রয়েছে। বাঁকখালীর শাখা নদীগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মাসুদ সিদ্দিকী জানান, সেচকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বোরো চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীটি খনন করা জরুরি বলে জানান। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, কৃষকরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসছে গতকাল দিনব্যাপী পরিদর্শনে যাব যেখানে বাধ পাব মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করব। বেড়িবাঁধ কোথাও থাকলে তাৎক্ষণিক খুলে দেব রাবার ড্রেম যেখানে আছে যদি পানি ধরে রাখে খোলার ব্যবস্থা করব। কৃষক বাঁচলে আমরা বাঁচব। শুকিয়ে যাওয়া নদীটি খননে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাব। রামু উপজেলার কৃষক রমিজউদ্দিন বলেন, বাঁকখালী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের হাহাকার বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ নদী খনন না করলে আগামী দিনগুলোতে এ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।

 

সর্বশেষ খবর