সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে গো-খাদ্যের সংকট

বিদেশি ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে গো-খাদ্যের সংকট

দিনাজপুরে গো-খাদ্যের সংকট কাটাতে ও কম খরচে বেশি লাভের আশায় বিদেশি ঘাসের চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। গবাদিপশুর দানাদার খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খড় ও বিদেশি ঘাসে ঝুঁকছেন গবাদি পশুর খামারিরাও। জেলার মধ্যে দিনাজপুর সদর, খানসামা, চিরিরবন্দর, ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ীতে বেশি চাষ হয় এ ঘাসের। দরিদ্র ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে থাকা পশুপালনের মাধ্যমে বাড়ছে কর্মসংস্থান ও আত্মনির্ভরশীলতা। কিন্তু ফিড সিন্ডিকেটের কারণে খরচ বেশি হওয়ায় এবং খামারে লাভ না হওয়ায় প্রাকৃতিক উপায়ে কাঁচা ঘাস ও খড়ের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। তাই দিনাজপুরের খানসামায় গবাদিপশুর প্রধানখাদ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে জারা, নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। এবার খানসামা উপজেলায় ৯৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাস চাষ হয়েছে বলে জানা যায়। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকরও। এদিকে লাভজনক হওয়ায় খানসামার ছয়টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কম খরচে ঘাস চাষ বাড়ার সঙ্গে বাড়ি ও খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদি পশু পালনের সংখ্যাও বাড়ছে। আবার নিজের গবাদিপশুর খাদ্যচাহিদা মেটানোর পর তা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন চাষিরা। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ভ্যানে ফেরি করে ঘাস বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। এতে ঘাস চাষের সঙ্গে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানও হয়েছে অনেকের। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, খেতে ফসলের পাশাপাশি সবুজ পাতার ঘাসের সমাহার। ঘাস চাষ করে লাভবান হওয়া ও কর্মসংস্থানের কথা আগে কেউ না ভাবলেও আজ বাস্তব জানালেন চাষিরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎসাহে গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঘাস চাষে আগ্রহী হয়েছেন খামারি ও কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রতি দেড় মাস পর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করেন তারা। ভ্যানে ঘাস বিক্রি করা রফিকুল ইসলাম জানান, আমতলী বাজারের পাশে পাকচং জাম্বু ঘাস চাষ হয়। সেখান থেকে আটি ছয় থেকে আট টাকা দরে কিনে ফেরি করে ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। এতে প্রতিদিন ৫০০-৮০০ টাকা আয় হয়। বেকার বসে না থেকে তার মতো অনেকেই ঘাস বিক্রি করে এখন সংসার চালাচ্ছেন। ঘাস চাষি ও খামারি আবদুর রহিম বলেন, অনেক শিক্ষিত বেকার ও ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্তরা খামার গড়ে লাভবান হচ্ছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কয়েক হাজার খামারে। খরচ কম হওয়ায় এবং তিন মাস পরপর বিক্রির সুযোগে স্বল্প পুঁজিতে অনেকেই নেপিয়াসহ বিদেশি ঘাসের চাষে নেমেছেন। খানসামা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, খামারিদের মধ্যে নেপিয়ার, পাকচং ঘাস চাষে উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি আগ্রহী খামারি ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। উপজেলায় ৯৮ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষ হয়েছে। এ ছাড়া সাইলেজ তৈরি করলে অনেক ঘাস একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যায়। এতে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁচা ঘাস বা খড়ের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে অধিক ফলনশীল ঘাসের মধ্যে পাকচং ও নেপিয়ার উল্লেখযোগ্য। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর।

সর্বশেষ খবর