মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সয়াবিনের বাম্পার ফলন

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

সয়াবিনের বাম্পার ফলন

‘নারিকেল, সুপারি আর পানে ভরপুর আমাদের প্রিয় রায়পুর’। বর্তমানে নারিকেল, পান আর সুপারির সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘দিন বদলের ফসল’ নামে পরিচিত সয়াবিন। সয়াবিনের বাম্পার ফলনে ও সঠিক দাম পাওয়ায় কৃষকে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপকূলবর্তী অঞ্চলে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ পাঁচটি চর ও চারটি ইউনিয়নে হাজার হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়। ‘দিন বদলের ফসল’ হিসেবে খ্যাত সয়াবিনের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস। চর ইন্দুরিয়া, কানিবগা, জালিয়ারচর, চরঘাশিয়া, চরকাচিয়ার বিস্তীর্র্ণ চরাঞ্চল এবং উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে এবার সয়াবিনের প্রচুর ফলন হওয়ার কারণে এখানকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাজার হাজার একর জমিতে চাষ হওয়া পরিপক্ব সয়াবিন খেতের বাদামি রং যেন নতুন এক আবহের সৃষ্টি করেছে। চলতি বছর কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারার আনন্দে কৃষকের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। প্রায় ২০ বছর আগে সয়াবিনের চাষাবাদ শুরু হলেও বর্তমানে এটি রায়পুর উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। গুরুত্ব বিবেচনায় ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন এ জেলাকে ‘সয়াল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যথাযথ মূল্য পাওয়ায় এখানে সয়াবিনের চাষাবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যে কারণে লক্ষ্মীপুরকে সয়াল্যান্ড হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসই হলো সয়াবিন আবাদের উপযুক্ত সময়। সার ও কীটনাশক তেমন দিতে না হওয়ায় এবং আগাছা কম থাকায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে সয়াবিন পরিপক্ব হওয়ায় বর্তমানে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমিকরা। উপজেলার কয়েকটি বাজারসহ হায়দরগঞ্জ বাজারে দেশের উৎপাদিত ৭৫ ভাগ সয়াবিন কেনাবেচা হয়। সয়াবিনকে কেন্দ্র করে হায়দরগঞ্জ বাজারে পাঁচটি চাতাল ও শতাধিক পাইকারি দোকান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া হাজীমারা, আখনবাজার, মোল্লারহাট ও খাসেরহাটে ৫০-৬০টি পাইকারি দোকানে সয়াবিন কেনাবেচা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রায়পুরে মোট ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতি বছর এ উপজেলায় মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন বেচাকেনা হয়।

জালিয়ার চরের সয়াবিন চাষি আবদুল গণি মাল বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবার প্রায় তিন একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে গত দুই বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হবে। সময়মতো সয়াবিন ঘরে তুলতে পারলে ঋণও পরিশোধ করতে পারব। উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নূরনবী পন্ডিত, রাশেদুল হায়দার রকি, শাহাদাত হোসেন সর্দার ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোলট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী যেমন- সিটিগ্রুপ, বিশ্বাস গ্রুপ, নারিশ, সিপি, এস. আলম, কাজী ফার্মস ও আফতাব গ্রুপসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো এ উপজেলা থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে থাকে। শতকরা ৭৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হলেও সয়াবিনকে কেন্দ্র করে আজও গড়ে উঠেনি কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান। সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ ও সরকারি আনুকূল্য পেলে রায়পুরের সয়াবিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দিতে পারে বলে জানান তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খানম বলেন, এ উপজেলায় ব্যাপক হারে সয়াবিন উৎপাদিত হয়। আমরা সয়াবিন চাষিদের দোরগোড়ায় গিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে সয়াবিন ‘দিন বদলের ফসল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর