বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদীকে খাল বানানোর অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

নদীকে খাল বানানোর অভিযোগ

নদীর মাঝখানে সরু করে খননে পরিণত হয়েছে খালে

কুষ্টিয়ার খোকসায় সিরাজপুর হাওর নদী খননের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড়াইয়ের অন্যতম শাখা সিরাজপুর হাওর নদী খনন প্রকল্প নেওয়া হয়। নদীর উৎসমুখ থেকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার ভাটির পাংশা উপজেলার সীমান্তের গ্রাম কলিমহর পর্যন্ত খননের জন্য প্রায় ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। হাওর নদী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাবিবর রহমান হবির বনিবনা না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে ১৩টি এলসিএস কমিটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। হাওর নদী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নীতিমালা থাকলেও কর্তৃত্ব চলে যায় জানিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও  ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদের হাতে। এক্সেভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নদীর তলদেশে খাল খনন শুরু করেন। এ ছাড়া নদীর মাটি ইটভাটায় বিক্রি করাসহ নদীপারের সরকারি জমির অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাটি ভরাট বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সিরাজপুর হাওর নদীর উৎসমুখের স্লুইস গেট থেকে চর দশকাহুনিয়া গ্রাম পর্যন্ত নদী খননের কথা ছিল। পানিশূন্য নদীর মাঝ থেকে ১৫ ফুট চওড়া ও ৫ ফুট গভীর করে ৩ কিলোমিটার খাল কাটা হয়েছে। কিছু মাটি ইটভাটায় বিক্রিও করা হয়েছে। অবৈধ দখলদাররা নদীর ভিতরের নতুন মাটিতে কলার গাছ রোপণসহ চাষাবাদ শুরু করেছেন। এ ছাড়া একতারপুর বাজার থেকে শৈলডাঙ্গী মহম্মশান পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারজুড়ে অবৈধ দখলদারদের আয়ত্তে থাকা সরকারি জমি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। নদীর ভিতরে সরকারি জমিতে কেউ গড়ে তুলেছে ইমারত, কেউবা বসতবাড়ি করেছেন। কিন্তু ৩ কিলোমিটার খননের পর আর মাটি কাটা হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজে মাছ চাষের জন্য একতার বাজারের ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে নদীতে মাটি দিয়ে চওড়া বাঁধ দিয়েছেন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক হাজার একর আবাদযোগ্য জমি জলামগ্ন হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। হাওর নদীর সাবেক জলকর ইজারাদার আবদুল মান্নান বলেন, তিনি গত বছর ইজারা নিয়ে নদীতে মাছ চাষ করেছিলেন। বেতবাড়িয়া মোড় থেকে দশকাহুনিয়া পর্যন্ত কিছু জায়গায় ৭ মাস পানি থাকত। কিন্তু এবারে নদী খননের নামে খাল তৈরি করা হয়েছে। এখানে আর কিছুই করা সম্ভব নয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে শুধু টাকার হরিলুট হয়নি, হরিলুট হয়েছে নদীর মাটিও। নদীর মাটি দিয়ে সরকারি জমি দখল পোক্ত করেছে চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্টরা। উপজেলা প্রকৌশলী আবদুস সামাদ বলেন, প্রকল্প পরিচালক নিজে কাজটির তদারকি করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফায় প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। মান ভালো হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর