সন্ধ্যা হলেই মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়। আর চুরিসহ অনৈতিক কার্যকলাপ চলে আসছে। জনসাধারণ তো দূরের কথা কোনো প্রাণীকেও দেখা যায় না সেখানে। অনেকটা ভূতুড়ে পরিবেশে চলছে লালমনিরহাটের বিসিক ক্ষুদ্র এ শিল্পনগরী। উত্তর জনপদের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। জেলাটির প্রায় চারদিকে নদী ও ভারতীয় সীমান্ত হওয়ায় বরাবরই অবহেলিত থেকে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া কখনই পায়নি। এ ছাড়া জেলাটিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি হওয়ায় এবং শিল্প কলকারখানা না থাকায় বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চরম ঊর্ধŸগতির এ সময়ে লালমনিরহাটের এই বেকার সমস্যা জেলার সার্বিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা আর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে সম্ভাবনাময় লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী কখনই আশার আলো জ্বালাতে পারেনি। বর্তমানে বিসিক শিল্পনগরীটি দেখলে মনে হয় কোনো গোচারণভূমি। শিল্প উদ্যোক্তাদের অনীহা, ঋণ প্রদানের সু-ব্যবস্থা না থাকা আর লোকবল সংকটের কারণেই গড়ে উঠছে না কোনো নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সাপ্টিবাড়ীতে ১৯৮৭ সালে ১৫ দশমিক ৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ। ১০৭টি প্লট তৈরির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে এর অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়। কাজ শেষে এখানে ৩৫টি শিল্প ইউনিট গড়ে তোলার জন্য সব প্লট বরাদ্দ নেন আগ্রহীরা। কিন্তু বর্তমানে একটি প্লাস্টিক কারখানা, দুটি তারকাঁটা ফ্যাক্টরি, একটি ময়দা মিল, একটি হিমাগারসহ মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অব্যাহত লোকসান, বিদ্যুৎ সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় বন্ধ রয়েছে কয়েকটি কারখানা। বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসায়ী শিল্প মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস ছালাম বকুল বলেন, সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগের ব্যবস্থা, উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং লোকবল সংকট সমস্যা দূর হলে বিসিক তার প্রাণ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস করেন। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে প্লটের দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ৬২ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এ কারণেই একাধিক উদ্যোক্তা বিসিক শিল্পনগরীতে তাদের শিল্পকারখানা স্থাপনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসায়ী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাদৎ হোসেন সাদু জানান, বিসিক শিল্পনগরীটি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সন্ধ্যা হলেই মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের আড্ডা, জুয়াসহ অনৈতিক কার্যকলাপ হয়। এ কারণে এখানে প্রতিদিন চুরির মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও অযতেœ অনেক শিল্প মালিক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। বিসিক শিল্পনগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. এহছানুল হক জানান, গত দুই বছর আগে প্রতি শতক জমির ইজারা নিতে হতো মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর বর্তমানে সেখানে ৬২ হাজার টাকা দিতে হয়।
তাই আগ্রহীরা বিসিক শিল্পনগরীতে তাদের শিল্প কলকারখানা স্থাপন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, লালমনিরহাটের এই বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্প কলকারখানা স্থাপন হলে একদিকে যেমন জেলার বেকার সমস্যার সমাধান হবে অন্যদিকে সরকারের কিছুটা হলেও রাজস্ব আয় হবে। এ ছাড়া এই জেলা শিল্প কলকারখানা স্থাপনের একটি উত্তম জায়গা। আগে যোগাযোগ বেশ অনুন্নত ছিল। কিন্তু তিস্তা সড়ক সেতু হওয়ার ফলে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। তাই অল্প সময়ের মধ্যে বিসিক শিল্পনগরীতে ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রহণকৃত প্লটে কারখানা স্থাপন করবেন। বিসিক শিল্পনগরী জেলার বেকার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি লালমনিরহাটের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে এই প্রত্যাশা জেলার সচেতন মহলের।