নওগাঁর বদলগাছীতে চারটি স্কুলমাঠে হাট বসে। এতে স্কুলগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। জানা যায়, বদলগাছী সদরে সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল ও মডেল সরকারি প্রাথমিক স্কুল একই স্থানে অবস্থিত। দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরা একই মাঠ ব্যবহার করে। সেখানে সপ্তাহে শনি ও বুধবার দুই দিন হাট বসে। এখানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাঁচা তরিতরকারি পাইকারি কেনাবেচা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল কিনে বড় বড় ট্রাক লোড করেন। ফলে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে। ব্যাপক কর্দমাক্ত হওয়ায় মাঠের মধ্য দিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। হাটের দিনগুলোতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হাটের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে জুতা-প্যান্ট কর্দমাক্ত হয়ে ঠেলাঠেলি করে স্কুলে পৌঁছে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়ে। অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী হাটের মধ্যে ইভ টিজিংয়ের শিকার হলেও লজ্জায় কাউকে বলতে পারে না। বাসায় ফিরে বাবা-মাকে জানালেও তারা কিছু করতে পারে না। বদলগাছী হাটের দক্ষিণ পাশ রাস্তাটি হাটের দিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও দুধ বিক্রেতাদের দখলে থাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট হয়। উপজেলার সর্ববৃহৎ কোলাহাটে রয়েছে আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, বিজলী হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলসহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভান্ডারপুরেও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভান্ডারপুর দ্বিমুখী হাইস্কুল, সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও সাবিত্রি বালিকা বিদ্যালয়। ভান্ডারপুর স্কুলমাঠে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাঁচামালের পাইকারি বাজার বসে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। উপজেলার আরও একটি বৃহৎ হাট গোবরচাঁপা। রয়েছে ডিগ্রি কলেজ, হাইস্কুল ও সরকারি প্রাথমিক স্কুল। দুপুরের পর থেকে গরু কেনাবেচার হাট বসে। স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠগুলো দখল করে দেদার হাট ইজারাদাররা দীর্ঘদিন থেকে তাদের হাট-বাজারের কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও দেখার কেউ নেই। শিক্ষানুরাগী মোস্তফা মাহমুদ গোলাম জানান, ভান্ডারপুর হাট-বাজারের দিন স্কুলমাঠ দখল করে হাট-বাজার বসানোর জন্য শিক্ষর্থীদের চরম হয়রানি হতে হয়। স্কুলের মাঠ নষ্ট হয়। গোবরচাঁপা হাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মেহেদি হাসান মিল্টন বলেন, স্কুলমাঠে হাট না বসানো এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান ঠিক রাখতে হলে স্কুলমাঠে হাট বসানো বন্ধ করতে হবে। স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা একই সুরে বলেন, স্কুলের দিন স্কুলমাঠে হাট বসানোর কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচল ও শিক্ষকদের পাঠদান ব্যাপকভাবে বিঘ্ন ঘটে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। বদলগাছী সদরের হাট ও গোবরচাঁপা হাট ইজারাদার জনি জানান, গোবরচাঁপা হাট স্কুলমাঠে হাট বসে তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়া হয়। কোলাহাট ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন জানান, স্কুল ও কলেজের মাঠ ব্যবহার করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিতে হয়। বদলগাছী ইউএনও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, বিষয়টি নজরে রয়েছে। আলোচনা করে দ্রুত স্কুলমাঠ থেকে হাট স্থানান্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।