বগুড়ার শেরপুর শহরের হরিতলা কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে এক যুগ আগে একটি পাকুড় ও একটি বটগাছ লাগিয়েছিলেন রিনা রানী দাস। স্থানীয় গোসাইপাড়ার প্রদীপ দাসের স্ত্রী তিনি। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। গাছ দুটিকে সন্তানের মতোই পরিচর্যা করতেন রিনা রানী। ইচ্ছে ছিল গাছ দুটি বড় হলে মা হিসেবে মহা ধুমধামে তাদের বিয়ে দেবেন। এর আগেই গত বছর পরলোক গমন করেন রিনা। তাঁর ওই ইচ্ছে পূরণে পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার হয়েছে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে। পৌরসভার থানা রোডসংলগ্ন হরিতলা কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে বিয়ের আয়োজন করা হয়। বটগাছটি কনে এবং পাকুড়টিকে বর মেনে সনাতন ধর্মীয় রীতিতে মানুষের মতো বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। চারদিকে রঙিন কাপড় দিয়ে করা হয় সাজসজ্জা। বাদ যায়নি আলোকসজ্জাও। অতিথিদের দেওয়া হয়েছে নিমন্ত্রণপত্র। আমন্ত্রণ জানিয়ে শহরজুড়ে মাইকে প্রচারণাও চালানো হয়।
অতিথি আপ্যায়নে রাখা হয় নিরামিষ খাবার। বাজে সানাইয়ের সুর। উলুধ্বনি দেন শত শত নারী।
পুরোহিত পাঠ করেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয় বিয়ের আসর। সকাল থেকে বিয়ের কার্যক্রম চলে রাত পর্যন্ত।
রিনা রানীর স্বামী প্রদীপ দাস বলেন, তার স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল সন্তানের মতো লালন-পালন করা বট ও পাকুড় গাছ দুটির বিয়ে দেবেন। এজন্য দিন তারিখও ঠিক হয়েছিল। হঠাৎ তিনি মারা যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এক বছর পর হলেও তাঁর ইচ্ছে পূরণে গাছ দুটির বিয়ের আয়োজন করেন। রিনার বোন রানু দাস, গীতা রানী ও গোলাপী রানী বলেন, আমার ওই বোনের কোনো সন্তান ছিল না। তিনি গাছ দুটি রোপণ করেন। সন্তানের মতো যত্ন করতেন। মা হিসেবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়েও দিতে চেয়েছিলেন। মারা যাওয়ায় সেটি করতে পারেননি। বোনের ইচ্ছে পূরণ ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় মহা ধুমধামেই বট ও পাকুড় গাছ দুটির বিয়ে দিলাম। পুরোহিত অমিত তরফদার হোদল বলেন, যুগ যুগ ধরে বট ও পাকুর বা আমলকী গাছের বিয়ের রীতি প্রচলিত। এটি শুধু বিয়ের আয়োজন নয়, এর উদ্দেশ্য বৃক্ষরাজদের রক্ষা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।