কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রামে কুমার নদের ওপর ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও। এতে সড়ক যোগাযোগে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার লাখো মানুষ। পণ্য পরিবহনে বেড়েছে কৃষকের ব্যয়। সেই সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এলাকাবাসী ও দূরদূরান্ত থেকে কৃষিপণ্য নিতে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার পাশেই রয়েছে বহু পুরোনো স্টিল ব্রিজ। এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় আরও অর্ধশতাব্দী আগে সেখানে ওই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর স্টিল ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হলে পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া হাট-জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া সড়কের কুমার নদের ওপর প্রি-স্ট্রেজড গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া ৮১ মিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজ ২০২২ সালের ৮ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফা সময় বাড়ানোর পর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসেও এখনো বাকি অনেক কাজ। তবে কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে কাজের বাকি রয়েছে ১০ শতাংশ।স্থানীয়রা জানান, একসময় স্টিল ব্রিজ দিয়ে কুষ্টিয়ার সদরের বিত্তিপাড়া থেকে উজানগ্রাম-ঝাউদিয়া হয়ে বাস চলে যেত আলমডাঙ্গা-পাটিকাবাড়ি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কুষ্টিয়া সদরের উজানগ্রাম, ঝাউদিয়া, মনোহরদিয়া ও গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতে এই সড়ক পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটির কাজ আটকে থাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর এ অঞ্চলে কোনো মিল কলকারখানা হচ্ছে না।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের এলাকা থেকে বাস চলত শহরে। বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন গ্রাম থেকে কলেজে আসা প্রায় অসম্ভব। এজন্য শহরে থেকে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে বাবার অনেক কষ্ট হয়, তা বুঝেও টাকা নিয়ে এসে শহরে খরচ করতে হচ্ছে।
সেতুটির নির্মাণকাজ করছে এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি) নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া অবশ্য দাবি করেন, ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ কাজ আগামী মাসের মধ্যেই শেষ হবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কাজ প্রায় শেষ। এর আগে যারা সাব-কন্টাক্টে কাজটি করছিল, ৫ আগস্টের পর তাদের পাওয়া যায়নি। এখন মূল ঠিকাদার কাজটি দ্রুত শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছে। আশা করি, আগামী মাসেই ব্রিজটির কাজ শেষ হলে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে পারব।