কিশোরগঞ্জে দিনদিন বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু। জেলায় গত ছয় বছরে বাজ পড়ে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। চলতি বছরের দেড় মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। নিহতদের বেশির ভাগই হাওরের বাসিন্দা। অভিযোগ আছে, বৃষ্টি-বজ্রপাতের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য কোনো স্থান নেই বিস্তীর্ণ হাওরে। ঝড়, বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলে কোথাও আশ্রয় নিতে পারেন না কৃষক ও জেলেরা। ২০১৬ সালের মে মাসে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সরকার। এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হাওরের কৃষক-জেলেদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। নেই বজ্রপ্রতিরোধক দণ্ড। কিশোরগঞ্জের মোট আয়তনের ৪৬ শতাংশই হাওর। এর অবস্থান ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা জানান, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় লোকালয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাওরের খোলা প্রান্তরে একটিও আশ্রয় কেন্দ্র ও বজ্রপ্রতিরোধক দণ্ড নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ কর্মকর্তা জানান, বজ্রপাতে গত ছয় বছরে জেলায় শতাধিক লোক মারা গেছেন। বজ্রাঘাতে নিহতের দাফন-কাফন কিংবা সৎকারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, বৈশাখ মাস থেকে পুরো বর্ষা মৌসুমে হাওরের কৃষক ও জেলেদের আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠে বোরো ধান কাটা এবং অন্য সময় মাছ ধরাসহ নানা কাজে কৃষক ও জেলেরা হাওরে অবস্থান করেন। ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরুর সময় বিস্তীর্ণ হাওরের কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, বজ্রপাতের সময় হাওরে কর্মরত কৃষক ও জেলেরা যাতে একটু আশ্রয় নিতে পারেন সেই চিন্তা থেকে তিনি অষ্টগ্রাম সদরের ধোপা বিলে একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এবং নিজে ভর্তুকি দিয়ে দোতলা আশ্রয় কেন্দ্রটি করেন। এখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পুরো হাওর অঞ্চলে এমন আশ্রয় কেন্দ্র থাকলে বজ্রপাতে হতাহত কিছুটা হলেও কমত। হাওরের কৃষক ও জেলেরা জানান, খোলা প্রান্তরে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বাড়িতে স্বজনরাও থাকেন দুশ্চিন্তায়। তারা জানান, লোকালয় থেকে হাওর পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরে থাকায় চাইলেও যখন-তখন বাড়ি ফেরা সম্ভব হয় না। হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হলে তারা উপকৃত হবেন।