স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বহরমপুর-মির্জাপুর করতোয়া নদীর ঘাটে নির্মাণ হয়নি সেতু। ফলে বছরের পর বছর করতোয়া নদীর ওপর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে খেয়ানৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে অন্তত ১৫ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষার প্রায় ছয়-সাত মাস এ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে হয় খেয়ানৌকায়। আর শুকনো মৌসুমে নদীর ওপর অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে হয় তাদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় শিশু, বৃদ্ধ, রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের। এখানকার মানুষের জন্য যেন অভিশাপ এ নদী। বাঁশের সাঁকোটি একবারে সরু, পুরোনো এবং নড়বড়ে। সামান্য ভারী মালামাল হলেই ভারসাম্য হারিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে বৃষ্টি, কুয়াশা বা অন্ধকারে এ সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়াও অনেক ঝুঁকির।
করতোয়া নদীর পশ্চিমপাড়ের বহরমপুর, মামাখালী, বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর, করকোলা, বরদানগর, চিনাভাতকুর ছাড়াও আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ এবং পূর্বপাড়ের মির্জাপুর, নিমাইচড়া, গৌরিপুর। যেখানে রয়েছে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, উচ্চবিদ্যালয়, মাদরাসা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ব্যাংক এবং মির্জাপুর হাট। এসব স্থানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন হাজারো মানুষ। বর্ষাকালে নৌকা না চললেও অনেক সময় রোগী নিয়ে নদীর পাড়েই আটকে থাকতে হয়। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বিপজ্জনক সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম ও জরুরি সেবাও ব্যাহত হয় সেতুর অভাবে।
বিন্যবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, বর্ষায় নদী ভরা থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পার হতে হয়। খেয়ানৌকার জন্য কখনো কখনো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শীতকালে বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়। সেটা এতটাই দুর্বল থাকে যে, ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়। অসুস্থ, গর্ভবতী ও শিশুদের নিয়ে পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
বরদানগর গ্রামের ইকবাল বাহার বলেন, করতোয়া নদীর ওপর সেতু না থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, কলেজ, ভূমি অফিস কিংবা হাটবাজারে যেতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। এমনকি অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাস মিস করে।
এলাকাবাসী বলছেন, একবিংশ শতাব্দীতেও বাঁশের সাঁকোই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এটা হতাশাজনক। তারা দ্রুত বহরমপুর-মির্জাপুর নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে স্বাভাবিক যাতায়াত ও উন্নয়নের পথ সুগম করার জোর দাবি জানান।
চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, সরেজমিন দেখে ও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে যদি কোনো প্রকল্প তৈরি ও জমা দেওয়া থাকে সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে।