নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক ছাত্রীর ১২৫ টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনার জের ধরে মাদরাসার ৪২ জন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করায় রবিবার মাদরাসার এক সহকারী শিক্ষিকাকে এবং শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটি। ঘটনা তদন্ত করতে সহকারী সুপারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
নির্যাতিত ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা জানায়, শনিবার উপজেলার পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী শিমলা খাতুনের কমন রুমে রাখা বইয়ের মধ্য থেকে ১২৫ টাকা হারিয়ে যায়। বিষয়টি ওই ছাত্রী শিক্ষকদের নজরে আনে। এ ঘটনায় মাদরাসার সুপার শামসুল আরেফিন সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন। সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস কমন রুমের দরজা আটকে রুমের ৪২ জন ছাত্রীর দেহ তল্লাশি করেন এবং এ সময় অনেকের বোরকা খুলেও এ তল্লাশি চালান। তল্লাশিতে টাকা পাওয়া না যাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া ওই টাকা কেউ চুরি করেছে কিনা এমন স্বীকার করার জন্য ৩০ মিনিট সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও হারিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার না হওয়ায় কমন রুমের দরজা বন্ধ করে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ৪২ জন ছাত্রীকে বেত দিয়ে মারপিট করেন সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। এদের মধ্যে ১৫-২০ জন বেশি আহত হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ছুটির পর বাড়ি গিয়ে বিষয়টি ছাত্রীরা তাদের অভিভাকদের জানালে অভিভাকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিষয়টির কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা রবিবার সকালে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে। মাদরাসা থেকে মিছিলটি বের হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার ফরহাদ আহম্মেদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু বলেন, এক ছাত্রীর ১২৫ টাকা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪২ জন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করেছেন মাদরাসার সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। এ ঘটনায় সকালে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক করা হয়।
বেত্রাঘাতের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিষ্ঠানের সুপার শামসুল আরেফিনকে এবং শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করায় সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করতে মাদরাসার সহকারী সুপার আফজাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুল করিম ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফিরোজুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাদরাসায় গিয়ে সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদরাসা সুপার শামসুল আরেফিন বলেছেন, টাকা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখতে সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করেছেন। কমনরুম থেকে টাকা হারানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলেও তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা