প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে লেগেছে ভোটের হাওয়া। নিয়ম অনুযায়ী এখনই আনুষ্ঠানিভাবে ভোট চাওয়ার সুযোগ না থাকলেও নানা কৌশলে ভোটারদের মন জোগাতে মাঠে সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পাড়া-মহল্লার ক্লাব, সংঘ আর চায়ের দোকানগুলো মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী আলোচনায়। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে বেড়েছে নেতাকর্মীদের আনাগোনা। সব মিলিয়ে উৎসব আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলা।
এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিবেন। এবার দেশের ৪ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ৬ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ মে চতুর্থ ধাপে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ১৩টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীদের অনেকে শোডাউন করেছেন, জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন নানাভাবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ও নামাজে জানাযায় অংশ নিয়ে মানুষের দোয়া চাচ্ছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ ঘরে বসে নেই। সরাসরি ভোট না চেয়েও নানাভাবে জনসংযোগে নেমে পড়েছেন তারা। পাড়া-মহল্লার প্রতিটি ক্লাব, সংঘ বা সংগঠনের অফিসে হাজির হচ্ছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন এলাকাবাসীর। কোথায় রাস্তা দরকার, কোন এলাকার কি সমস্যা এসব নিয়েও কথা বলছেন তারা। এছাড়া এলাকার বিয়েশাদিসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেলেই দলবলে হাজির হচ্ছেন। কোথাও কোথাও চোখে পড়ার মতো উপহার দেয়ার প্রতিযোগিতাও চলছে এসব অনুষ্ঠানে।
এদিকে, সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষের কিছু লোকজন কৌশলে হাটে-বাজারে, চায়ের দোকানে নির্বাচনী আলোচনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আলোচনা জমিয়ে বুঝে নেয়ার চেষ্টা করছেন ভোটারদের আগ্রহ কার দিকে। কার মন যোগাতে কি করতে হবে তাদের ইত্যাদি। অনেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। এখানেও ভোট না চেয়ে কৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ভোটের এই আমেজে এলাকার প্রবীণ ও গুণীজনদের কদর বেড়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোট না চেয়ে এখন দোয়া চাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতোদিন কাগজপত্রে ইউপি নির্বাচন নির্দলীয় হলেও মূলত অঘোষিতভাবে দল মনোনীত কিংবা দল সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবও ছিল প্রকটভাবেই দৃশ্যমান। এ বিবেচনায় রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছেন দীর্ঘদিন ধরেই। অন্যদিকে, আমাদের দেশে এ ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নানা মহলের শঙ্কাও রয়েছে। তবে নতুন ব্যবস্থার আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ায় দলগুলোর তৃণমূলে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও সক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যাবে।
এছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতীক পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এরই মধ্যে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ ১শ' ৬৬ জন ও ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত বিএনপি তাদের ৩৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মাঝে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেন।
চৌদ্দগ্রামের ১৩ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন ফরম নেয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন :
১নং কাশিনগর ইউনিয়ন: উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামছুল আলম মজুমদার, উপজেলা যুবলীগ নেতা মাহবুবুল হক ও মাহবুবুর রহমান। বিএনপির আলহাজ হারুনুর রশিদ মজুমদার, ওমর ফারুক মজুমদার মামুন, মোস্তাফিজুর রহমান।
২নং উজিরপুর ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন খোরশেদ মেম্বার, যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন সর্দার, নিজাম উদ্দিন মিঞা, শহিদুর রহমান রতন, আলী আশ্বব, জহির উদ্দিন পিন্টু, মো. ফজলুল হক, মীর জালাল উদ্দিন দুলাল ও মফিজুর রহমান।
৩নং কালিকাপুর ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন মজুমদার, জসিম উদ্দিন মজুমদার, জাফর আলম, ইছাক মজুমদার, হাজী নুরুল হক খন্দকার, আলা উদ্দিন মজুমদার, যুবলীগ নেতা সেলিম আহমেদ শামস্, গোলাম রসুল ও আবদুল মালেক।
৪নং শ্রীপুর ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগের শাহজালাল মজুমদার। বিএনপির এম জহির উদ্দিন, আবু তাহের মজুমদার, আহসান হাবিব।
৫নং শুভপুর ইউনিয়ন: ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মজুমদার, যুবলীগ নেতা এএসএম শাহিন মজুমদার, মোকতাদ হোসেন মজুমদার, অধ্যাপক মফিজুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, এবিএম ভুলু, কবির আহম্মদ, আনিছুর রহমান, মো. শাহজাহান, একরামুল হক ও দ্বীন মোহাম্মদ মজুমদার। বিএনপির আহসান হাবিব জিয়া, সফিকুর রহমান ডালিম।
৬নং ঘোলপাশা ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন মেম্বার, আবুল কালাম ভূঁইয়া, কাজী জাফর, একে এম মজিবুর রহমান, জিএম জাহাঙ্গীর আলম, শেখ কামাল, কাজী মোজাম্মেল হক লাওশান, দ্বীন মোহাম্মদ দিলু, আবদুল কাদের, মাহবুবুল হক মজুমদার ও নুরুল হক ভুঁইয়া। বিএনপির কামরুল হাসান, সফিকুল ইসলাম।
৮নং মুন্সিরহাট ইউনিয়ন : যুবলীগ নেতা কামরুল আলম মোল্লা, জসিম উদ্দিন মুহুরী, হেলাল উদ্দিন মজুমদার, মাহফুজ আলম, আলহাজ একে ফারুক আহম্মেদ ভুঁইয়া, নুর ইসলাম, জহিরুল ইসলাম মজুমদার, আলা উদ্দিন মজুমদার, আলী আক্কাস মজুমদার, মিজানুর রহমান, এডভোকেট এয়াকুব আলী, শামছুল আলম ভূঁইয়া, আবদুছ ছাত্তার, মাছম বিল্লাহ রিপন, শাহ আলম মিয়াজী, হালিম মোল্লাা, মাষ্টার আবদুল মালেক ও হারুনুর রশিদ। বিএনপির আবদুর রাজ্জাক, আবদুল কাদের মোল্লা, মাওলানা জিয়াউর রহমান মজুমদার।
৯নং কনকাপৈত ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম ডিলার, বেলাল হোসেন, ভ ম আফতাবুল ইসলাম, ইউসুফ মজুমদার, জহিরুল হক মজুমদার, নজরুল ইসলাম মজুমদার, মাইন উদ্দিন মামুন, জিয়াউর রহমান, মজিবুল হক ভুঁইয়া, ইকরামুল হক দুলাল, জাফর ইকবাল, আবুল কাশেম মজুমদার, শাহিন, খন্দকার এনামুল হক, মাষ্টার ওয়ালী উল্যাহ, আবুল কাসেম, ইসমাঈল চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, মো. সোহরাওয়ার্দী, ওমর ফারুক, মফিজুর রহমান, আফজালুর রহমান, আবদুল খালেক, মিজানুর রহমান, মাইনুল হাসান, হাফেজ বিল্লাল পাটোয়ারী, মিজানুর রহমান, মো. মহি উদ্দিন, কামাল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল কাদের, মো. ইয়াসিন ভুঁইয়া, বাবুল মজুমদার, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবুল কালাম, ইসমাঈল হোসেন, আবদুল হাই, মোহাম্মদ হোসেন, জান্টু মজুমদার, জোবায়েল হোসেন চৌধুরী ও সোহেল আলম মজুমদার। বিএনপির গাজী কবির, আবদুল মতিন মজুমদার, খালেদ সাইফুল্লাহ বাচ্চু, ইয়াছিন ভূঁইয়া, ফারুক হোসেন মজুমদার।
১০নং বাতিসা ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ হোসেন টিপু, আবদুল হাই কানু, আবদুল রহিম মজুমদার, জসিম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান টিপু, ইয়াসিন উদ্দিন, বেলাল মোলা ও আলী হায়দার মিয়াজী। বিএনপির ইয়াসিন, মনির হোসেন, আবদুল করিম সাজু, আবু বক্কর ছিদ্দিক।
১১নং চিওড়া ইউনিয়ন : আ’লীগ নেতা একরামুল হক, আবদুল কাদের ভুঁইয়া, আতিকুর রহমান, যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান চৌধুরী শিপন, জিয়াউর রহমান খান, গোলাম সরোয়ার মিজান, কামাল উদ্দিন দুলাল, নুরুল আমিন ভুঁইয়া। বিএনপির আবুল কালাম আজাদ জালাল, রাসেল আহম্মদ মজুমদার, কাজী রকিব, দেলোয়ার হোসেন মজুমদার মাসুম।
১২নং গুণবতী ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, সৈয়দ আহম্মদ খোকন, রফিকুল ইসলাম রফিক, শাহ হেলাল খুরশিদ, নুর ইসলাম নুরু, আবদুল ওয়াদুদ দুলাল, জামশেদুর রহমান শাহেদ, আব্দুল খালেক, গোলাম মাওলা শিল্পী, মুজিবুর রহমান, সাইদুর রহমান সাদু, যুবলীগ নেতা আবদুল আউয়াল সাইফুল, মো. রিপন, নুর ইসলাম মজুমদার, হেলাল শিকদার, নুরুল ইসলাম, আবুল খায়ের, মো. মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ, গোলাম মাওলা হাজারী, মো. ফয়সাল। বিএনপির মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
১৩নং জগন্নাথদীঘি ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুল আলম মজুমদার কানন, যুবলীগ নেতা জান ই আলম, মাহবুবুল হক খান, কামাল পাটোয়ারী, আবদুর রউপ বাবু, হাফেজ ওবায়দুল হক, জাফর পাটোয়ারী, আবদুল্লাহ আল মামুন, জাফর উল্যাহ, নুরুল ইসলাম মজুমদার সবুজ, মীর মোশারফ হোসেন মানিক ও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী শামীম। বিএনপির আবদুল হালিম।
১৪নং আলকরা ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম পাটোয়ারী, একেএম গোলাম ফারুক হেলাল, খোরশেদ আলম, শাহাদাৎ হোসেন শামীম, ফয়েজ আহমেদ ভুঁইয়া সেলিম, সানা উল্যাহ ভুঁইয়া, আবদুল আওয়াল ভুঁইয়া সোহেল, জয়নাল আবেদীন। বিএনপির আ ন ম সলিমুল্লাহ টিপু, মাস্টার লুৎফর রহমান মানিক। এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা জানান, প্রতিটি ইউনিয়ন একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন ফরম নিলেও দলে কোনো কোন্দল নেই। বরং দলীয় প্রধান যাকেই মনোনীত করবেন, অন্যরা তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।
প্রসঙ্গত: এর আগে দেশে সব মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে আটবার। সবশেষ ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রথম দফায় প্রায় ৬০০ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই ৩ হাজার ৮০০ এর বেশি ইউপিতে নির্বাচন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা