আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে সাতক্ষীরায়। প্রাতিদিনই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচার মাইক ভাংচুর ও তাদের কর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
সাতক্ষীরায় মোট ৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭৭টিতে চেয়ারম্যান পদে ৩৪৪ জন প্রার্থী মাঠে প্রচারনার কাজ করছেন। আর একটিতে কোন প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলারোয়ার সোনাবাড়ীয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে ৬৬টি ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বাকী ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে বিএনপি তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছে। আর ৯টিতে জেলা বিএনপি প্রার্থী দিতে ব্যার্থ হয়েছে।
তবে জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীদের হামলা, ভাংচুর ও মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাধা ও কেড়ে নেওয়ার কারনে তারা কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া, যুগীখালি, কেরালকাতা, দেয়াড়া, কয়লা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়ীয়া ও চম্পাফুল ইউনিয়ন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী এবং দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়ন সহ মোট নয়টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া ৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৩টিতে জাতীয় পার্টি, জাসদ ১১টিতে, ওয়ার্কাস পার্টি ৬টি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩টিতে ও বিএনএফ ২টিতে এবং জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ ও জামায়াতের প্রার্থী মিলে মোট স্বতন্ত্র পদে ১৪৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় সাতক্ষীরাতে বেশ কয়েকটি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জামায়াতের নেতারা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম ও যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আবু জাহিদ ডাবলু জানান, গত ইউপি নির্বাচনে ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি তে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোটের প্রার্থী জয়লাভ করে। শুধু মাত্র ১৪টি বাদে সব কটিতে আওয়ামী লীগ ভরা ডুবি হয়। এবারও সেই পরাজয়ের আশংকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন জমাদানে বাঁধা প্রদান করে হামলা চালায়। বিশেষ করে কলারোয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও তাদের লোকজন উপজেলা নির্বাচন অফিসের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাঁধা প্রদান করে ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলা চালায়। সে কারনে সোনাবাড়ীয়া, যুগীখালি, কেরালকাতা, দেয়াড়া, কয়লা সহ এই ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের কোন ভাবে মনোয়ন পত্র জমাদিতে পারেনি তাদের প্রার্থীরা। কিন্তু এই ৫টি পরিষদেই বিএনপির প্রার্থীরা গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রচার মাইক ঢুকতে দিচ্ছে না। লিফলেট ও পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোন ফল মিলছে না।
তারা আরও জানান, গত দুই দিন আগে সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রউফ এর ধানের শীষের প্রচার মাইক আলীপুর হাটখোলা ও মাহমুদপুর রাজারে গেলে ভাংচুর করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ডাক্তার মসিউর রহমান ওরফে ময়ুর ডাক্তারের লোকজন। এর আগে ২ মার্চ শিবপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে তার লোকজন হামলা চালিয়ে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মজিদের প্রচার মাইক ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এসময় আহত হন প্রার্থী আব্দুল মজিদের ছেলে নুরুজ্জামান ও ভ্যান চালক নাঈম।
এদিকে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মোদাচ্ছেরুল হক হুদার কর্মীরা যুগীপোতা গ্রামে ধানের শীষে ভোট চাইতে গেলে তাদের ২৭ জন কর্মীকে হুমকি ধামকি দিয়ে কমান্ড স্টাইলে ওই এলাকা থেকে বের করে দেয়। চেয়ারম্যান প্রার্থী মোদাচ্ছেরুল হক হুদার অভিযোগ আওয়ামী সমর্থিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু সানার ভাই খিজির ও নৌকার কর্মী শহিদ শেখ এর নেতৃত্বে তাদের ১০/১৫ জন কর্মী ওই যুগীপোতা থেকে মারপিট করার জন্য তার কর্মীদের উদ্যাত হয়ে তাড়িয়ে বের করে দেয়। পরে বিভিন্ন স্থান থেকে ধানের শীষ প্রতিকের পোষ্টার নামিয়ে ফেলা হয়। এর আগে গত ২ মার্চ ধুলিহর থেকে সাতক্ষীরায় আসার পথে ব্রম্মরাজপুর এলাকার সাহেব বাবুর মোড়ে আসলেই হামলার শিকার হন ওই বিএনপির প্রার্থী। পরে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারন ডায়রি করার জন্য অভিযোগ করেন।
এদিকে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে প্রতিদিনই সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক কতৃক একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
বুধবার আবারও আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের কর্মী সমর্থকরা হামলা চালিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা রুহুল কুদ্দুসের সমর্থিত আওয়ামী লীগের ৩ কর্মীকে রক্তাক্ত জখম করেছে। সকাল ৮ টার দিকে গদাইপুর মৎস্য ছেট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন আনারুল ইসলাম(৪৪), নুরুজ্জামান(৪৩)ও মুজিত মোল্যা (৪৫)। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বিকাল ৪টার দিকে ওই গদাইপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা রুহুল কুদ্দুসের প্রচার মাইক গেলে সেটিও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় তারা।
বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা রুহুল কুদ্দুস জানান, হামলার শিকার তার ওই কর্মীরা গদাইপুর মৎস্য ছেটে সকালে মাছ বিক্রি শেষে একটি চায়ের দোকানে বসে তার নির্বাচনী প্রচারনার কাজ করছিল। এসময় চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম মোটরসাইকেল যোগে এসে তার নেতৃত্বে কর্মী রাব্বানি মোল্যা, হাফিজুল ইসলাম, মফিজুল ও জামাল তাদের উপর লোহার রড ও চাইনিজ কুরাল দিয়ে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে বিকাল ৪টার দিকে ওই এলাকায় তার ঘোড়া প্রতিকের প্রচার মাইক গেলে সেটিও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় ডালিম চেয়ারম্যানের লোকজন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ মার্চ ১৬/ সালাহ উদ্দীন