লামা উপজেলা থেকে কাঠ ও লাকড়ি পাচারের মহোত্সব শুরু হয়েছে। অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ব্যক্তি মালিকানা বাগানের মূল্যবান বৃক্ষ ও চারা গাছ নিধন করে পাচার হচ্ছে তামাকচুল্লি, ব্রিকফিল্ডে। একে কেন্দ্র করে এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের পরোক্ষ সহায়তায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সিন্ডিকেটের গাঁয়ের জোরে বন-বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক ও নৌ পথে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাঠ ও লাকড়ি। এই যেন মগের মুলস্নুক !
শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বর্তমানে তামাক চুল্লি ও ব্রিকফিল্ডে লাকড়ি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লামা উপজেলার ২৪টি ব্রিকফিল্ড ও প্রায় ৪ হাজার তামাক চুল্লিতে পুড়ানো হচ্ছে পাহাড়ের মূল্যবান কাঠ। পাশাপাশি কাঠ চোরাকারবারীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অন্যের জায়গা ও ভুয়া কাগজ দেখিয়ে পারমিট করে পরিকল্পিতভাবে উজাড় করছে বনের কাঠ। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, কোনোভাবে একটি পারমিট বা নিলামের টিকিট পেলেই তা দেখিয়ে চলে কয়েক দফা কাঠ পাচার। পারমিট ২ হাজার ফুটের হলেও নিয়ে যাচ্ছে ২০ হাজার ফুট।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যে জায়গার নামে পারমিট করা হয় সেখানে নেই গাছ। এক জায়গার পারমিট অথচ গাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে অন্য জায়গা থেকে। কখনও আবার রিজার্ভের গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে পারমিটের নামে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন রূপসীপাড়া-লামা সড়ক দিয়ে দেড় শতাধিক জিপ, ট্রাক্টর ও ট্রলি দিয়ে তিনশত গাড়ি অধিক লাকড়ি ও গাছ পাচার হচ্ছে। কাঠের গাড়ির দৌরাত্বের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
অপরদিকে, মাতামুহুরী নদীপথে প্রতিদিন শতাধিক নৌকা দিয়ে কয়েক দফা করে পাচার হচ্ছে লাকড়ি। পাশে সেনা ক্যাম্প, আনসার ব্যাটালিয়ন ও বন-বিভাগের স্টেশন। তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। লামা-চকরিয়া রোড, ইয়াংছা-মানিকপুর রোড, লামা-সুয়ালক রোড, কেয়াজু পাড়া-আমিরাবাদ রোড, লুলাইং-কেয়াজু পাড়া রোড, বগাইছড়ি-ফাঁসিয়াখালী রোড, হারগাজা-ডুলহাজারা রোড, বনফুর-ইয়াংছা রোড, কাঠাঁলছড়া-ইয়াংছা রোড, কম্পনিয়া-পূর্বচাম্বি রোড ও গজালিয়া-আজিজনগর রোড দিয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে লাকড়ি ও কাঠ। তবুও স্থানীয় প্রশাসন কেন নীরব রয়েছে ? তাই স্থানীয়রা অবৈধ কাঠ ও লাকড়ি পাচাররোধে জরুরি ভিত্তিতে লামাস্থ ১৮ ব্যাটালিয়ন’র লামা আর্মি ক্যাম্প ও বন-বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
অবৈধ কাঠ পাচারের বিষয়ে একাধিক বিট অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, কাঠ পাচারের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য নেই। আঁঁতাতের বিষয়টিও মিথ্যা বলে তাদের দাবি। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন বনবিট কর্মকর্তারা।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ মার্চ ২০১৬/শরীফ
