বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তেলীগাতি গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী কৃষক অলিয়ার ডাকুয়াকে ৫০) অপহরণের আজ বর্ষপূর্তি। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল তাকে অপহরণ করা হয়। টানা এক বছরেও অলিয়ার ডাকুয়ার কোনো সন্ধ্যান মেলাতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯ টায় এইচএসচি পরীক্ষার্থী মেয়ে রনজিদাকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘মা তুমি পরীক্ষা শেষে বাড়ি এসো, আল্লাহ চাহেতো আমি বিকেলে ফিরে আসবো’। কিন্তু আজও ফেরেননি অলিয়ার। তার আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে চোঁখের জল ফেলছেন তার অসহায় ৭ সন্তান ও ৩ স্ত্রী।
পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার দিন একই গ্রামের মুনসুর গাজীর ছেলে জামাল গাজী (৪২) অলিয়ারকে জমি কেনাবেচার বিষয়ে দলিল দেখানোর কথা বলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনায় নিয়ে যায়। সেদিন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খোলা ছিল তার মোবাইল ফোন। তারপর থেকে নেই কোনো সন্ধ্যান। পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা ১ দিন পরে ৩ এপ্রিল থানায় জিডি করে। ৫ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে ২ ঘণ্টার সময় দিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপন চায় অলিয়ারের অপহরণকারীরা। ৬ এপ্রিল জামাতা সোহাগ জিডির কপিসহ ঘটনা জানান র্যাবকে।
৭ এপ্রিল থানায় মামলা দায়ের করতে যান সোহাগ। থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম মামলা না নিয়ে কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। ওসি বলেন, ‘তোমরা নিজেরাই অলিয়ারকে গুম করেছো।’ নিরুপায় হয়ে গেল বছরের ২৫ মে বাগেরহাট মানবপাঁচার অপরাধ দমন ট্রাইবুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন অলিয়ারের দ্বিতীয় স্ত্রী ফাতেমা বেগম। অভিযোগ আমলে নিয়ে অবিলম্বে এজাহার হিসেবে গণ্য করতে মোরেলগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন বিজ্ঞ জেলা জজ। অবিশ্বস্য হলেও সত্য যে, ওই নির্দেশের ২৭ দিন পরে ২২ জুন থানায় মামলাটি রেকর্ড হয় যার নং-২৪(৬) ২০১৫।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) তারক বিশ্বাস ভিকটিম ও আসামিদের কল রেকর্ড(সিডিআর) অনুসরণ করে খুলনা থেকে আসামি রুস্তম আলী খানকে গ্রেফতার করেন। এরপরে বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার অজান্তে ১ মাস ১২ দিনের মাথায় মামলাটি চলে যায় খুলনা সিআইডিতে। ২য় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র এসআই আবুহেনা ৫/৮/১৫ তারিখ থেকে মামলার তদন্তভার পান। তার হাতে তদন্ত চলছে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে। এই সময়ের মধ্যে তিনি এ মামলার প্রধান আসামি জামাল গাজীকে গ্রেফতার জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
মামলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই আবুহেনা বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ১নং আসামি গ্রেফতার আছে। ভিকটিম উদ্ধার নেই।
এ সম্পর্কে মামলার বাদি ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেন যে, প্রভাবশালী আসামিরা তদ্বীর করে মামলাটি সিআইডিতে নিয়েছে। এ পর্যন্ত অপহৃত আওয়ামী লীগ কর্মী অলিয়ার ডাকুয়ার কোনো সন্ধ্যান দিতে পারেনি সিঅাইডি। আসামিদের ইচ্ছায় মামলাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বলেও অভিযোগ ফাতেমা বেগমের।
অলিয়ার ডাকুয়ার সন্ধ্যান করতে নেমে বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে স্ত্রী সন্তানদের। আসামিদের অব্যাহত হুমকিতে পালিয়ে বেড়াতে হয় বাদিনী ও তার সন্তানদেরকে।
বিডি-প্রতিদিন/১ এপ্রিল ২০১৬/শরীফ