সুন্দরবনকে নাশকতার আগুন থেকে রক্ষা করতে ৫ টি ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’ গঠন করেছে বন বিভাগ। এই ফায়ার ওয়াচার টিমগুলো নাশকতা রোধে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি ও টহল দেবে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আব্দুল্লার ছিলার গহীন অরণ্যে সোমবার ভোরে পরিকল্পিত ভাবে ধরিয়ে দেয়া আগুন সন্ধায় নিভে গেলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এক একর বনাঞ্চল।
আগুন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে আসার পর রাত ৯ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সুন্দরবন থেকে চলে এসেছে। মঙ্গরবার সকালে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য চাদঁপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ আগ্নিকান্ডের স্থান পরিদর্শন করে তদন্তের কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে সুন্দরবনে পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ৬ আসামীকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে শরণখোলা থানা পুলিশ।
মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে একই স্থানে দ্বিতীয় বার আগুনের ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা দাবী করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ১২ এপ্রিল রাতে একই এলাকার বনে চোরাই পথে মাছ চাষ করার জন্য যারা পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো তাদের ৬ জনকে শনাক্ত করে রবিবার আদালতে মামলা করায় বিচারক আসামীদের নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ৬ আসামী বা তাদের অনুসারিরা পরিকল্পিত ভাবে আবারও সুন্দরবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রথমিক তদন্তে তারা এ বিষয়ে জড়িতদের সর্ম্পকে তথ্য পেয়েছে। এসব তথ্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দেয়া হয়েছে।
কথিত ইজারার নামে সুন্দরবনের বিলে অবৈধ্য মাছ চাষে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা- কর্মচারি জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ডিএফও আরও জানান, সুন্দরবনকে আর যাতে নাশকতার আগুনে পুড়তে না হয় সেজন্য ৫টি ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’ গঠন করেছে বন বিভাগ। এই ফায়ার ওয়াচার টিমগুলো নাশকতা রোধে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি ও টহল দেবে।
এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও আগুনে বনজ সম্পদের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা চুড়ান্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ আরম মিয়া জানান, সুন্দরবনের বিলে মাছ চাষ করতে পরিকল্পিত ভাবে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের আটকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। সুন্দরবন বিভাগে দায়েরকৃত আগুন লাগিয়ে দেয়া মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ৬ আসামী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের শাহ জাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারী, আল আমীন হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, সাহেব হাওলাদার, খলিল হাওলাদার ও ছগির হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
সাংবাদিকদের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়া বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার একাধিক ব্যক্তি জানান, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর এলাকার শাহজাহান শিকারির নেতৃত্বে একটি মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর সুন্দরবনের কর্মকর্তাদের লাখ-লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সুন্দরবনের কয়েকটি বিল অলিখিত ভাবে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করে থাকে।
মাছের বিল তৈরী করতে ওইসব বিলে জমে থাকা গাছের পাতা উঠিয়ে ও নিচু এলাকা পরিস্কার করতে শুষ্ক মৌসুমে তারা সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে থাকে। এরপর বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। কারেন্ট জাল পেতে তার সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে অবৈধ্য উপায়ে হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ এপ্রিল, ২০১৬/ হিমেল-০৮