পাবনায় জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি- ৬৪ ধানের সফল উৎপাদন হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এ ধান আবাদে আগ্রহও বাড়ছে পাবনার কৃষকদের মধ্যে।
মানবদেহের গঠন, বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশে একটি অন্যতম উপাদান জিঙ্ক। শিশুর নিওমোনিয়া, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে খাদ্যের এই উপাদান। মাংস, দামী ফলমূলে এ উপাদান থাকায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী জিঙ্কের অভাবজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এ ঘাটতি পূরণে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবনে বাজারে আসে জিংক সমৃদ্ধ ধান ব্রি-৬৪। চলতি বোরো মৌসুমে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার নুরনগর গ্রামে এ জাতের ধানের সফল উৎপাদন হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি।
নুরনগর গ্রামের কৃষক মো. জুয়েল রানা জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে অল্প কিছু জমিতে এই ধানের পরীক্ষামূলক আবাদ করি। ফলন খুবই ভাল হয়েছে। আর যেহেতু শরীরের জন্যও উপকারী, আগামীতে আমি আরও বেশি জমিতে এ ধানের আবাদ করবে। গ্রামের অন্যান্য কৃষকও আমার কাছে এ ধানের আবাদ করার জন্য বীজ চেয়েছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি কেজি ‘ব্রি ধান ৬৪’ তে ১৯ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ও নয় শতাংশ আমিষ রয়েছে। অধিক ফলনশীল ও স্বল্প সময়ে চাষযোগ্য এই ধান রোপণের একশ’ দিন পরেই ঘরে ওঠায় উৎপাদন খরচও কমেছে কৃষকের। ব্যপক পরিসরে এ ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ অনেকটাই সম্ভব হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
এ প্রসঙ্গে হার্ভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের কুষ্টিয়া কৃষি উন্নয়ন ও গবেষণা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ জিঙ্কের অভাবজনিত নানা রোগে ভোগে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য এ উপাদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দামী খাবার ও ফলমূলে এ উপাদান থাকায় তা একসময় অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল। বর্তমানে ব্রি-৬৪ ধানে এ উপাদান সংযুক্ত থাকায় দরিদ্র মানুষ এখন খুব সহজেই এ চালের ভাত থেকে এ উপাদানটি গ্রহণ করতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী পাবনার উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, পাবনায় ব্রি ৬৪ ধান আবাদে কৃষকের মধ্যে ব্যপক সাড়া পড়েছে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় ফলন বাড়ার পাশাপাশি আগামীতে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকা রাখবে। হেক্টর প্রতি ছয় থেকে সাত টন উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় কৃষকের কাছে দ্রত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ধান। চলতি বছরে পাবনায় ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। দিনদিন এর চাহিদাও বাড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ মে, ২০১৬/ আফরোজ