হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় সংঘর্ষে অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া (৪০) হত্যার ঘটনায় ৭ সাংবাদিকসহ ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও ২ থেকে ৩ হাজার মানুষকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়।
শুক্রবার রাতে নিহত ফারুক মিয়ার স্ত্রী সালমা খাতুন বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামি সাংবাদিকরা হলেন-আশাহিদ আলী আশা, অলিউর রহমান অলি, মো. আলমগীর, এটিএম সালাম, নাবেদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন মিঠু ও আলাল মিয়া। তারা সকলেই স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-বাদল আহমেদ, সাগর মিয়া, সফিকুল ইসলাম নাহিদ, জহিরুল ইসলাম সোহেল, রাজ্জাক, মাহবুব আলম সুমন, সফিক মিয়া, নুরুল আমিন, সরোয়ার আহমেদ, উজ্জল মিয়া, সাকিব মিয়া।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক বছর আগে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা সাংবাদিক আশাহীদ আলী আশা নবীগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব তিমির পুর গ্রামের খসরু মিয়াকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন। কিন্তু সময়মতো বিদেশ পাঠাতে না পারায় খসরু মিয়া তার পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ফারুক মিয়াকে নিয়ে একাধিকবার তাগিদ দেন। টাকা না দিয়ে বরং আশাহীদ আলী আশা তাদের গালাগাল ও হুমকি দেন।
গত ৩ জুলাই বিকেলে নবীগঞ্জ শহরের লতিফ মার্কেটের সামনে পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে খসরু মিয়ার সাথে আশাহীদ আলী আশার কথা কাটাকাটি হয়। পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে আনমনু ও পূর্ব তিমির গ্রামবাসীর মধ্যে। এর জের ধরে ওই দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে গত সোমবার (৭ জুলাই) সকালে আনমনু ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পূর্ব প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। বিকাল ৩টায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পাশাপাশি শতাধিক দোকান পাট ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘর্ষ এড়াতে ৪টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন শহরের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে প্রশাসনের আইন ভঙ্গ করে দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নবীগঞ্জ শহর। সংঘর্ষে দুপক্ষের শতাধিক লোকজন আহত হন। এর মধ্যে পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের আউয়াল মিয়ার ছেলে অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়াকে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে আনমনু গ্রামের লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
আহত অন্যান্যদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান জানান, সংঘর্ষে ফারুক নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত করে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই