নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় রসুনহাট এলাকার 'আল্পনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২'-এ ভুল চিকিৎসায় নুরুন্নাহার বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যর অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে গুরুদাসপুর থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নিহতের স্বামী শামসুল আলম বাদী হয়ে অভিযোগটি দেন। এতে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক মোহা. শফিউল ইসলাম ও ক্লিনিক মালিক আলাল হোসেন অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্লিনিক মালিক আলাল হোসেন দাবী করেন তারা যথাযথভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারটির বাড়ি পাশের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুরাবিনোদ ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর গ্রামে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তারা ওই ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।
অভিযোগের কপি ভুক্তভোগী শামসুল আলমের সাথে কথাবলে জানাগেছে, গৃহবধু নুরুন্নাহার বেগম অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ১২ জুন সকাল ১০টার দিকে ওই ক্লিনিকে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিউল ইসলাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন রোগী নুরুন্নহার বেগমের গর্ভধারণের জোড়ানালিতে (জরায়ু) সমস্যা। তাকে অপারেশন করা হবে। এজন্য রক্তসহ ১৯ হাজার টাকা দাবি করা হয় ভুক্তভোগী পরিবারটির কাছে।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রাজী হন নুরুন্নাহারের স্বামী শামসুল আলম। ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই গৃহবধুর অপারেশন করেন চিকিৎসক শফিউল ইসলাম। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো প্রকার রক্ত সরবরাহ করা হয়নি। স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে তার স্বামী নিজ উদ্যোগে চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেন। এতে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়। এভাবে তিনদিন আধ মরাবস্থায় ক্লিনিকে চিকিৎসা চলে। অবস্থার আরো অবনতি হলে গত ১৫ জুন রাতে ক্লিনিকের পাওনা বাবদ ১৭ হাজার টাকা বুঝে নিয়ে রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রোগী নুরুন্নাহারের আত্মীয় শিবলু মিয়া জানান, মুমূর্ষবস্থায় রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ‘ভুল চিকিৎসা ও অপারেশনের সময় কিডনিতে আঘাত পাওয়ার হওয়ার কারণে রোগীর এই অবস্থা হয়েছে। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন জেনে তাকে বাসায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।’
রোগীর স্বামী শামসুল আলম বলেন, মনে না বুঝায় তাকে নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০ জুন গভীররাতে মারা যায় তার স্ত্রী। তিনি ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ‘আল্পনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২’-এর চিকিৎসকের মুঠোফোন বেশ কয়েকবার ফোন ঢুকলেও তিনি রিসিভ করেননি। গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা আনন্দ মোহন বলেন, অভিযোগটি তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
বিডি-প্রতিদিন/২২ জুন ২০১৬/শরীফ