কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও এর ধকল কাটিয়ে উঠতে ভুক্তভোগীদের অনেক সময় লাগবে। এদিকে এ অবস্থায়ও চলতি বন্যার আগে নেওয়া ঋণের কিস্তির জন্য তাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে বন্যার্তদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই উপজেলায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিভিন্ন এনজিও। বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেলেও ঋণগ্রহিতাদের কিস্তির টাকার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। কিস্তির জন্য অমানবিক চাপ দেওয়া হচ্ছে বানভাসিদের ওপর। হাতে-পায়ে ধরেও রেহাই মিলছে না। কিস্তি নিয়ে এনজিও কর্মীদের সঙ্গে বানভাসিদের ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা ঘটছে। কিস্তির টাকার জন্য এনজিওর কর্মীরা কৃষকের গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। ফলে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাত পাতছেন সুদখোর মহাজনের কাছে।
রাজীবপুর উপজেলার চরনেওয়াজী গ্রামের ৪০০ পরিবারের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পুরোপুরি শুকাতে আরও সময়ের প্রয়োজন। সুলতানা বেগমের দুটি ঘর বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ''বানের পানিতে মরবার নাগছি, হের ওপর এনজিওর কর্মী আইছে কিস্তির জন্য। ঘরে খাবার নাই এর পরও কিস্তির টাকার জন্য চাপ দেয়। কইলাম, সঞ্চয় থিকা কাইটা নেওয়ার জন্য। তাও মানে না। পরে কর্জ কইরা আড়াই শ' ট্যাহার কিস্তি শোধ করলাম।''
নয়াচর সবুজপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, ''এনজিও থিকা ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিছি। এই বন্যার মইধ্যেও কিস্তির জন্য বইসা আছে। কর্মীর হাতে-পায়ে ধইরা কইলাম এ মাসে কিস্তি দিবার পারুম না। কিন্তু কিছুতেই সে মানছে না। কয় কিস্তি না নিয়া বাড়ি থিকা যামু না। পরে সুদের উপর ট্যাহা নিয়া কিস্তি দিছি।''
একই ধরনের অভিযোগ ওই গ্রামের কোহিনুর বেগম, সুফিয়া খাতুন, আছিরন বেগম, শরিফা খাতুনসহ অনেকের। ওই গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম রাজীবপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ''এনজিও কর্মীদের বলে দিয়েছি, এই বন্যার সময় যেন তারা কিস্তি নিতে না আসে। কোদালকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু জানান, এনজিওগুলো বন্যা-দুর্যোগ কিছুই মানে না।
একই চিত্র রৌমারীতে। নটানপাড়া গ্রামের মর্জিনা বেগম একটি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ''কিস্তির টাকার জন্য প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে। যেভাবেই হোক তাদের টাকা চাই। পরে সুদের ওপর টাকা নিয়ে তাদের কিস্তি দিয়েছি।'' জহুরা বেগম বলেন, ''কর্মীরা কিস্তির জন্য মাথা খাইয়া ফালায়। কিস্তি না দিলে ঘর থিকা গরু নিয়া যাবার চায়।'' একই ধরনের অভিযোগ করেন ছবুরা খাতুন, রাবেয়া বেগম, আছমা খাতুনসহ গ্রামের অনেকে।
রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম ও রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী জানান, এবার বড় ধরনের বন্যা হয়েছে। মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় ঘরে ঘরে খাদ্যের অভাব। এ অবস্থায় ব্যাংক ও এনজিওগুলোর অন্তত দুটি কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা উচিত।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ