নিম্নচাপের প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিভিন্ন নদ-নদীতে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকালে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা শেষে তীরে ফিরে আসার পথে উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে 'এফবি মায়ের দোয়া' নামের একটি মাছধরা ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আরও ১৪/১৫ টি মাছ ধরা ট্রলারের এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় ইতোমধ্যে বেশির ভাগ মাছধরা ট্রলার উপজেলার শিববাড়িয়া নদী, ঢোস, খালগোরাসহ উপকূলের বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় তিন নম্বর সর্তকতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মৎস্য বন্দর আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, মৎস্য বন্দর আলীপুর থেকে হানিফ মাঝির এ ট্রলারটি মাছ ধরার জন্য দু’দিন আগে সাগরে গিয়েছিল। মাছ ধরা শেষ করে কুয়াকাটায় ফেরার পথে ট্রলারটি প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে উল্টে যায়। এ ট্রলারে মাঝিসহ ১২ জন জেলে ছিল। এদের সকলকে অপর একটি ট্রলারের লোকজন ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে। এছাড়া কুয়াকাটা, আলীপুর, মহিপুর, খালগোড়া, গঙ্গামতি এবং ঢোস এলাকার এফ বি মালিহা, এফ বি সালেহা, এফ বি মামনি, এফ বি তামান্না, এফ বি আল রুমান, এফ বি বিসমিল্লাহ, এফ বি সাদিয়াসহ ১৪-১৫ টি মাছ ধরা ট্রলারের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপকুল জুড়ে হালকা বৃষ্টিসহ ধমকা হাওয়া বইছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের বাহিরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরফলে হাজার হাজর মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি, পুকুর ও মাছের ঘেরসহ বসত বাড়ি। বন্ধ হয়ে গেছে কৃষি কাজ। দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। এছাড়া উপজেলার মহিপুরের নিজামপুর গ্রাম, লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রাম ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুরের ভাঙ্গা বাধ দিয়ে রাবনাবাদ ও আন্ধার মানিক নদের পানি প্রবেশ করায় অন্তত ৩০ গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের সিদ্দিক মুন্সী বলেন, 'নিজামপুর গ্রামের অধিকাংশ ঘর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি ঘর-বাড়ির উঠান দেড়-দুইফুট পানিতে ডুবে আছে। নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের রাস্তাও পানিতে ডুবে গেছে।'
চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের বাচ্চু মোল্লা বলেন, দেবপুর গ্রামের ২৫০ ফুট বাঁধ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র সময় ভেঙ্গে যায়। বাঁধের ওই ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ব্যাপক জমি তলিয়ে গেছে। এবার পানির চাপ আগের চেয়ে বেশি। ২০-২৫টি পুকুর-ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা জানান, প্রচণ্ড জোয়ারের চাপে চারীপাড়া পয়েন্টের বাধ ভেঙ্গে গেছে। এরফলে আবারও আটটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও পাইলট বেলুন অভজারভেটরির (পিবিও) ভারপ্রাপ্ত ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলী মো.শাহ আলম বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ৩ নম্বর সমুদ্র সংকেত রয়েছে। এর প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ