আগামীকাল শুরু হতে যাচ্ছে জেএসসি পরীক্ষা। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারছে না স্কুলছাত্রী জাকিয়া সুলতানা। বিয়ের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এক বখাটে চাপাতি দিয়ে এলাপাতাড়ি কেপে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। তার হাত-মাথা-পা সর্বত্রই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অঙ্গহানির আশংকা এখনও রয়েছে। জাকিয়া নিজেও জানে না কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
আহত স্কুলছাত্রী জাকিয়া সুলতানার বাবা মো. জমসেদ আলী বলেন, প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করায় গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর আসামির বিরুদ্ধে করা জিডি অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিলে আমার মেয়েকে হয়তো নৃশংসভাবে জখম হতে হতো না। তিনি বলেন, জাকিয়া বর্তমানে ঢাকার পিলখানা বিজিবি হাসপাতালের আর্থোপেডিক ডাক্তার মেজর আলমের চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
জাকিয়া সুলতানার বাবা মো. জমসেদ আলী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের মিলরোড লেবার লাইন পাড়ার বাসিন্দা ও সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত বিজিবি সদস্য। তিনি পরিবার নিয়ে গত ২বছর ধরে বোচাগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকেন। জমসেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে বখাটে ইব্রাহিম চৌধুরী আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল। স্কুল যাওয়ার পথে প্রায় আমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি আমি ইব্রাহিম চৌধুরীর পরিবারকে জানাই। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বোচাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। কিন্তু তারপরেও বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ। এদিকে বখাটে যুবক ইব্রাহিম চৌধুরীর উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় মেয়ে। এরপরে ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে বাড়িতে গিয়ে শয়নকক্ষে প্রবেশ করে আমার মেয়েকে কুপিয়ে জখম করে। তার আত্মচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে ইব্রাহিম চৌধুরী পালিয়ে যায়। গুরতর আহত অবস্থায় তাকে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ঢাকার পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার সময় আমি চাকুরিস্থলে থাকায় আমার শ্বশুর আব্দুল হারেস খান বাদী হয়ে মামলা করেন।
সেতাবগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমি মাধ্যমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোলেমান শাহিন জানান, জমসেদ আলীর কন্যা জাকিয়া সুলতানা (১৩) এই স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল কিন্তু সে পরীক্ষা দিতে পারছে না। তার জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন নং-১৬১৭৭৭৭৭২৯। আমরা উপজেলার ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিকভাবে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছি। এ ঘটনায় তিনি বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। জিডির পরই পুলিশ ব্যবস্থা নিলে এরকম ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক সোলেমান শাহিন।
বোচাগঞ্জ থানার ওসি মো. হাবিবুল হক প্রধান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৭ সেপ্টেম্বর বখাটে ইব্রাহিম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইতোপূর্বে স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই।
এলাকাবাসী জানায়, বিবাহের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের মো. ইব্রাহিম চৌধুরী নামে এক বখাটে ৭ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার মিলরোড লেবার লাইন পাড়ায় স্কুলছাত্রীর বাড়িতে প্রবেশ করে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই দিন দুপুরে উপজেলার ছটকুর মোড় এলাকা থেকে বখাটেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আটক ইব্রাহিম চৌধুরী বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌরশহরের মিলরোড ছটকুর মোড় এলাকার কফিলউদ্দীন ওরফে বাচ্চা চেয়ারম্যানের ছেলে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ