দেশে ভুট্টার বাজার তৈরি হয়েছে মূলত প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্পকে কেন্দ্র করে। তাতে ভুট্টার আবাদ বাড়ার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ফিডশ্লিপ খাত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে দেশে গত এক দশকে সরকার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ৪৫০ ফিড কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ফিডের বাজার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার ও খাতটির সঙ্গে প্রায় ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রাণিখাদ্যের পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত উপ-খাতের বাজার মিলিয়ে এ বাজারের আকার ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার। খাতটিতে এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। তা ছাড়া ৭৫ থেকে ৮০ লাখ মেট্রিক টন প্রাণী খাদ্যের বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে দেশি উৎপাদিত ভুট্টার মাধ্যমে মেটানো হয়।
একটা সময় ফিড উৎপাদনের এই প্রধান উপকরণের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু বিগত এক দশকে দেশে ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এখন চাহিদার বেশির ভাগই দেশীয় উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে মেটানো হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিগত ১০ বছরে দেশে ভুট্টা আবাদ প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ লাখ ৫২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ৮৭ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে। ১০ বছরে ৭০ শতাংশ বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৩ লাখ টন ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফিড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ভুট্টা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এর বাজারটা প্রায় ৭৫-৮০ হাজার কোটি টাকার। প্রতিনিয়ত প্রোটিনের চাহিদার জন্য মাছ, মাংসের বিপরীতে পোলট্রির ওপর মানুষ নির্ভরশীল হচ্ছে। দিনদিন এর ব্যাপ্তি আরও বাড়বে। তাই আগামীতে ফিড ইন্ডাস্ট্রিকে সাপোর্ট দিতে চাহিদা পূরণ হওয়া পর্যন্ত আমাদের ভুট্টার আবাদ চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ায় দেশে ফিডশিল্পের এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশজুড়ে প্রায় ৪০০ ফিডমিল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ফিডমিলের সংখ্যা প্রায় ৩৫০টি ও অনিবন্ধিত সংখ্যা ১০০টি।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শরিফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের নিবন্ধিত ফিডমিল রয়েছে প্রায় ৩৫০টি। চাহিদার সঙ্গে আমাদের প্রাণী ও পশুর উৎপাদন দিনদিন বাড়ছে। ফলে বাজারও বড় হচ্ছে।
জানা যায়, দেশে উৎপাদিত প্রাণিখাদ্যের ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় পোলট্রি খাতে। ২৫ শতাংশ ব্যবহার হয় মৎস্য খাতে। আর বাকি ১৫ শতাংশ ব্যবহার হয় গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে। দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ৪০০ ফিডমিল রয়েছে। এর মধ্যে দেশজুড়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ফিডমিলের সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। বাকি ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অনিবন্ধিত।
তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রাণিখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অলটেকের ‘ফিড জরিপ প্রতিবেদন-২০২৫’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ফিড উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪০ কোটি মেট্রিক টন। ১৪২টি দেশের ২৮ হাজার ২৩৫টি ফিড কারখানার উৎপাদনের তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, ফিড উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে-চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত ও মেক্সিকো।
বাংলাদেশ ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (ফিয়াব) সভাপতি বলেন, চাহিদা বাড়ায় দেশে মৎস্য ও প্রাণিখাদ্যের বাজার বাড়ছে। প্রত্যেক বছর নতুন খামার গড়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে শিল্পমালিকদের ফিডের উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। এর বাজার আরও বড় হবে।