পাবনায় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনূকূল চন্দ্র আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসীর নামে চার্জশীট দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে স্থানীয়রা। বুধবার দুপুরে হেমায়েতপুর এলাকার কয়েক সহস্রাধিক নারী পুরুষ শহরে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারীরা জানায়, আলোচিত এ হত্যাকান্ডে পুলিশ প্রথমে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও তদন্তে আশ্রমের আর্থিক অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি আড়াল করতেই পুলিশ উৎকোচের বিনিময়ে আশ্রমের সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে ওই এলাকার নিরীহ লোকজনের নামে চার্জশীট প্রদান করে।
এর প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে ওই এলাকার সহস্রাধিক নারী পুরুষ শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে তারা এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পুন:তদন্ত দাবি করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলীপি দেন।
এ বিষয়ে ওই এলাকার আসামি শাহিন শেখ বলেন, আমার ব্যবসায়ী অংশীদার হারুন খাকে ধরে নিয়ে ব্যাপক মারপিট করে কয়েকজনের নাম তার মুখ দিয়ে বলানোর পর আমাদের নামে চার্জশীট দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনদিন এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত নই। অথচ কেন আমাদের নামে চার্জশীট দেওয়া হলো আমাদের বোধগম্য নয়। আসলে আমাদের এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে প্রকৃত আসামিদের ধরাছোয়ার বাইরে রাখার অপচেষ্টা করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বেশির ভাগ আসামিই দিন মজুর ও অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু কুদ্দুস মুন্সি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। সেখানে উৎকোচ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি নিয়ে আমি তদন্ত করলেও জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারাও দেখভাল করেছেন। চার্জশীট ভুক্ত ১১ জনের মধ্যে ৭ জন পলাতক রয়েছে।
অপর এক চার্জশীট ভুক্ত আসামি বলেন, মূল ঘটনা আশ্রমের টাকা ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে। প্রথম দিকে আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষও আসামি ছিল, অজ্ঞাত কারণে তার নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনূকূল চন্দ্র সেবাশ্রমের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে আশ্রমের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য বলাই কৃষ্ণ সাহা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন মতামত নেই, আমরা তো বলির পাঠা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাগ বাটোয়ারার কিছু নেই। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তার দাকি ওই সময়ে সারাদেশে জঙ্গি তৎপরতার ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে পাবনার পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জুন ভোরে পাবনা মানসিক হসপাতালের প্রধান ফটকে ঠাকুর অনূকূল চন্দ্র আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিনই পাবনা সদর থানায় অজ্ঞাতদের নামে একটি মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সী আব্দুল কুদ্দুস ১১ জনকে আসামি করে গত ৩১ অক্টোবর চার্জশীট দেন।
বিডি প্রতিদিন/২৩ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল