ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বাবার পা হারানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলার সব আসামিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করতে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ দেন। এর একদিন পর ১৬ আসামির মধ্যে ১ নম্বর আসামি কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনসহ ১৪ জন আসামি ঝিনাইদহ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে আদালতে উপস্থিত হন। এসময় তাদের সবাইকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (কালীগঞ্জ আদালত) কাজী মো. আশরাফুজ্জামান তাদেরকে কারাগারে পাঠায়। এছাড়াও আসামি আজাদুর রহমান আজাদ কারাগারে রয়েছেন এবং লিখন নামের অপর আসামি জামিনে রয়েছনি।
এদিকে গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় শেষের পাতায় “মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ পা হারালেন বাবা, মামলাও নেয়নি পুলিশ” শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রশাসনের টনক নড়ে। বিষয়টি সারাদেশে আলোচিত ঘটনা হিসাবে স্থান পায়। পরে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহানুর রহমানের দুই পা হারানোর ঘটনায় তার ভাই সামাউল বিশ্বাস গত ৬ নভেম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৬। ওই মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিক হাইকোর্ট বেঞ্চ বাকি আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করার নির্দেশ দেয়। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের কারাবন্দী করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব পুলিশের মহাপরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে পুলিশ সেই সময় মালমলার ২নং আসামি নলভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে আজাদুর রহমান আজাদ ও মামলার ৭নং আসামি মোতালেব বিশ্বাসের ছেলে লিখনকে পুলিশ আটক করে। আজাদ কারাগারে আছনি আর লিখন জামিনে রয়েছেন। বুধবার সকালে পুলিশ মামলার ৩নং আসামি আব্দুল মজিদের ছেলে কোরবান আলীকে আটক করে আদালতে পেশ করে। এছাড়াও বাকি ১৩ আসামি মামলার ১নং আসামি কামাল হোসেন, ৪নং আসামি সৈয়দ আলীর ছেলে মাহাবুব বিশ্বাস, ৫নং আসামি মাহবুব মেম্বারের ছেলে আজগর আলী, ৬নং আসামি আছির উদ্দিনের ছেলে মোতালেব, ৮নং আসামি আবুল তালেব, ৯নং আসামি ইদ্রিস আলীর ছেলে হাসান, ১০নং আসামি আবু বক্করের ছেলে বিল্লাল, ১১নং আসামি ইয়াকুব আলীর ছেলে জাহিদ হোসেন, ১২নং আসামি রুহুল আমিন, ১৩নং আসামি শিপন ওরফে দুখু, ১৪নং আসামি ইমমাদুল, ১৫নং আসামি আরিফ হোসেন ও ১৬নং আসামি বিপ্লব বুধবার সকাল ১১টার দিকে ঝিনাইদহ আদালতে জামিন নিতে যায়। এ সময় জুডিয়িশাল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় (কালীগঞ্জ আদালত) কাজী মো. আশরাফুজ্জামানের আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ।
উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের শাহানুর বিশ্বাসের ২ মেয়েকে বখাটেরা উত্ত্যক্ত করতো। এ ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর শাহানুর বিচার চাইতে যায়। এ সময় উত্ত্যক্তকারীরা শাহনুরকে রড, শাবল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব ও কামাল মেম্বার। পায়ে শাবল দিয়ে কোপানোর সময় পানি পানি বলে চিৎকার করলেও সেই সময় হামলাকারীরা তাকে পানিও দিতে দেয়নি। সেই সময় তাকে উদ্ধার করে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা হাঁটু থেকে তার দুটি পা কেটে ফেলে। এ পর্যন্ত তার পায়ে ৪ বার অপারেশন করা হয়েছে। পেশায় চাষী শাহানুর এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার পর শাহানুরের আত্মীয় ইয়াকুব আলী ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এছাড়াও ১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন তার ভাই সামাউল বিশ্বাস। এরপর মামলা তুলে নিতে বারবার তাদের পরিবারকে হুমকি দেয় আসামীরা। এছাড়াও আসামীরা সবাই আওয়ামী লীগ যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ-১২