লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিলুপ্ত ভিতরকুটি ছিটমহলে কালভার্ট-ইউড্রেন নির্মাণের দু’মাসের মাথায় একাংশ ধসে পড়ায় কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়। কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি। তবে ওই কমিটিতে নির্মাণ কাজের সময় তদারকির দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত সদর উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইনসাফুল হককে রাখায় তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত ভিতরকুটি ছিটমহলের প্রায় এক হাজার অধিবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় উপজেলা পরিষদ কিছুদিন আগে নির্মাণ করে তিনটি ইউড্রেন। অথচ এসবের একাংশ ভেঙ্গে পড়ে নির্মাণের মাত্র দুই মাসের মাথায়। বাকি অংশ রক্ষায় আটকিয়ে রাখা হয় বাঁশের খুটি দিয়ে।
এনিয়ে ভিতরকুটিবাসী তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করলেও অনিয়ম পিছু ছাড়েনি। অপরদিকে ২০/২৫ জন স্থানীয়রা নির্মাণ কাজের অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলামের কাছে গেলেও তার কিছু করার নেই বলে দায় সারেন নিজের। ফলে নিরুপায় হয়ে ফিরে আসেন অভিযোগকারীরা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি আড়াল করতে ঠিকাদারের লোকজন তড়িঘড়ি করে ভাঙ্গা অংশ মেরামত করে দায়সারাভাবে, তুলে ফেলা হয় বাঁশের খুঁটি, ফাটল ধরা অংশ ঢেকে ফেলা হয় সিমেন্ট গুলিয়ে।
এরপর ঘটনা তদন্তে গত ২০ নভেম্বর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় একটি কমিটি। তবে ইউড্রেনগুলি নির্মাণের সময় এলজিইডি’র অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইনসাফুল হককে ওই কমিটিতে রাখায় তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাবে না। অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইনসাফুল হককে তদন্ত কমিটিতে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওই কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন।’ তদন্ত নিরপেক্ষভাবেই সম্পন্ন সম্ভব হবে বলে তিনি দাবী করেন।
অপরদিকে এক কোটি একচল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিলুপ্ত ছিটমহল ভিতরকুটিতে নির্মাণাধীণ সড়কে ৭ টি বক্স কালভার্ট ও ১ টি ব্রিজ নির্মাণে নিম্ন মানের রড, বালু, সিমেন্ট, ইট, আর পাথর ব্যবহার আর ঢালাইয়ের কাজ রাতারাতি করার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ থাকলেও এলজিইডি কর্তৃক গঠন করা হয়নি কোন তদন্ত কমিটি।
এমনকি দুর্নীতি ঢাকতে কাজ স্বচ্ছ হয়েছে এবং রাতের বেলায় কোন কাজ হয়নি বলে উল্টো সাফাই গেয়েছেন এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন খান। এদিকে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল মতিন জানান, কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৯ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল