দীর্ঘ সাত বছর ধরে পঞ্চগড় বিএনপির মধ্যে বিদ্যমান গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকারের আহ্বানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মধ্যস্থতায় এই দ্বন্দ্ব শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী।
তারা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি শূন্য পঞ্চগড় বিএনপিতে নতুন কমিটি উপহার দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন মহাসচিব সহ আরও দুই কেন্দ্রীয় নেতা। এ নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে । আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনে দুই গ্রুপকে একসাথে দেখা যাবে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশা করছেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ৫ জানুয়ারী তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুসাইনের মৃত্যুর পর ওই পদটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। তৎকালীন ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয় রাজনীতির লড়াই।
পৌর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র তৌহিদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদকের পদটি দাবি করেন। এই পদটিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হলে তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোজাহার হোসেনের নেতৃত্বে একটি নতুন গ্রুপের সৃষ্টি হয়। এই গ্রুপে পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো পৃথক ভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করতে থাকে।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ একইভাবে কার্যক্রম চালাতে থাকে। যুব দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভপতি ফরহাদ হোসেন আজাদের নেত্বত্বে একটি গ্রুপ এই গ্রুপে যোগ দেয়। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে পঞ্চগড় বিএনপি।
পূর্বের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও দ্বন্দ্বের ফলে নতুন করে কাউন্সিলও অনুষ্ঠিত হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন নেতারা। অপরদিকে সরকারি দলের মামলা হামলায় পাঁচ উপজেলার নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করে তীব্র হতাশা। ঝিমিয়ে পরে কেন্দ্রীয় ঘোষীত বিভিন্ন আন্দলন কর্মসূচী।
গত কয়েক মাস আগে সাবেক সভাপতি মোজাহার হোসেনের মৃত্যুর পরই মূলত বরফ গলতে থাকে। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের টেলিফোনে মিমাংসার আহ্বান জানান। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১১ ডিসেম্বর ঢাকার ধানমন্ডির ইয়াকুব সাউথ সেন্টারে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওসাদ জমিরের কার্যালয়ে মিলিত হয় জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এই সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওসাদ জমির প্রমুখ। মধ্যস্থতা সভায় নেতাকর্মীরা পঞ্চগড় জেলার জন্য সৎ, নির্ভিক এবং শিক্ষিতদের নিয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি করে দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানান । এসময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে দেশে গণতন্ত্রকে ডাকাতি করে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সে দেশে বিএনপির গ্রুপ নিয়ে বসে থাকলে চলবেনা। এরপর তিনি উভয় গ্রুপের নেতা কর্মীদের মধ্যে হাত মিলিয়ে দেন। এসময় আনন্দঘন মুহুর্তের সৃষ্টি হয়। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি অনুযায়ী একটি পুর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
পৌর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র তৌহিদুল ইসলাম জানান, সকল দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। নেতাকর্মীরা আবার চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে । এখন দরকার বিএনপির জেলা কমিটি। একই মন্তব্য করেছেন আরেক গ্রুপের নেতা এম এ মজিদ।
বিডি প্রতিদিন/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল