পানির কৃত্রিম সংকটের ফলে নদীপাড়ের মানুষ তাদের জীবিকা হারাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে জীব-বৈচিত্র্য। বৃদ্ধি পাচ্ছে লবণাক্ততা। মেরে ফেলা হচ্ছে নদী। মানুষ হারাচ্ছে পানির অধিকার। নদী ও পানির অধিকার রক্ষায় এখনও নিশ্চিত হয়নি বাংলাদেশের জনঅংশগ্রহণ।
এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজন করেছে ওয়াটার ডেমোক্রেসি বা জল ও জলতন্ত্র সম্মেলনের। বুধবার সকালে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার হোটেল নীলাঞ্জনার হল রুমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহম্মেদ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস ড.আইনুন নিশাত, পানি ও পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ম. ইনামুল হক, এশিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ হাওর এবং জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. নুরুল আলম, নেপাল মহিলা অধিকার মঞ্চের উপদেষ্টা সাবিত্রি পোখারেল ও আবাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশ যতই উন্নত ততই পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য দেশে জাহাজ আসছে কিন্তু তাদের বর্জ্য পানিতে ফেলছে। যা আমাদের খাবার পানিকে বিষাক্ত করছে। দেশে প্রচুর পানি আছে, কিন্তু ব্যবহার ও খাবারের যোগ্য কতটুকু সেটাই এখন প্রশ্ন। নদীরও একটা অধিকার আছে। কিন্তু সেটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিদিনই আমাদের যে জলাভূমি আছে সেটা দখল হয়ে যাচ্ছে।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকশনএইড ভূমি ও পানি অধিকার বিভাগের ব্যবস্থাপক শমসের আলী। এ সম্মেলনে সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী, এনজিও প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের গবেষণা ও বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর পাঁচভাগের তিনভাগ পানি হলেও সুপেয় ও মিষ্টি পানির পরিমান মাত্র ২.৫ ভাগ। যা পৃথিবীর প্রায় ৭৪০ কোটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ ও ভারসাম্য রক্ষা করছে। আর এই মিষ্টি পানি প্রায় ৯০ ভাগই আসছে নদী থেকে। পৃথিবীর প্রায় দেড়শ’ নদী বা উপনদী রাজনৈতিক সীমানা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক কোনো কোনো নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রভাবে উজানে বিভিন্ন স্থানের সাধারণ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ বন্যা অথবা খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন মুনাফালোভী উদ্যোগ এবং এককেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কয়েকটি নদী এরইমধ্যে শুকিয়ে গেছে।
বিডি প্রতিদিন/২৫ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা